কুষ্টিয়ায় ফাতেমা হত্যার ময়নাতদন্ত রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য ধর্ষণের পর হত্যা

0
199

নিজস্ব প্রতিবেদক কুষ্টিয়া : আলোচিত কুষ্টিয়ার মিরপুর বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী উম্মে ফাতেমাকে গণধর্ষণের পর নির্মম-নৃশংসভাবে হত্যার প্রমাণ মিলেছে। চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, উম্মে ফাতেমাকে হত্যা করার আগে দলবদ্ধভাবে ধর্ষনের শিকার হয়েছে। দলবদ্ধ ধর্ষণের কারণেই তার যৌনাঙ্গের ভিতরে এবং বাইরে ত চিহ্ন রয়েছে। ধর্ষনের পরই তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ফাতেমার গলায় রশি দিয়ে পেঁচানোর কারণে গলার মধ্য বরাবর গোলাকার দাগ রয়েছে। বাম চোখের নিচেও আঘাতের কারণে রক্ত জমাট বাঁধা ছিল। পেটে ২টি, গলায় ৫টি ও পিছন দিকে মাজার উপর মেরুদণ্ড বরাবর ৩টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ছুরিকাঘাতের কারণে তার শ্বাসনালী এবং রক্তনালী তিগ্রস্থ হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আনুমানিক ১৩ তারিখ দিবাগত ভোর ৪ টার সময় এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। এদিকে হাসপাতালের রেকর্ড থেকে জানা যায় ১৪ তারিখ সকালে লাশ উদ্ধার হলেও ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে লাশ পাঠানো হয় ওই দিন সন্ধ্যা ৬.৫৫মিনিটে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ ময়নাতদন্ত রাতে করা হয় না। তাই স্কুলছাত্রী ফাতেমার মরদেহ পরের দিন অর্থাৎ ১৫ জুলাই সকাল ১০টায় হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার প্রায় ৩০ ঘন্টা পর লাশ ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তে উল্লেখ রয়েছে ফাতেমার মৃত্যু মূলত অতিরিক্ত রক্তরণের কারণেই হয়েছে। এ হত্যা মামলায় গত (০৯ নভেম্বর) ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ হত্যাকান্ডে সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত থাকার আলামতও মিলেছে। স্কুলছাত্রী ফাতেমার ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সী মেডিকেল অফিসার ডা, সুতপা রায়, মেডিকেল অফিসার ডা, রুমন রহমান ও কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলামের স্বারিত ময়নাতদন্ত রিপোর্টে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ফাতেমার হত্যার পর থেকেই এ মামলার বাদী ও নিহত ফাতেমার বাবা সাইফুল ইসলামের দাবি ছিল, একজন আসামির একার পে এত নির্মম-নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটানো সম্ভব নয়। এ মামলায় একজন আসামি গ্রেফতার করেই হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। নিহত ফাতেমার বাবা সাইফুল ইসলাম আরও জানান, হত্যার প্রথম দিকেই পুলিশের দেওয়া ঘটনার বিবরণেও তাদের আপত্তি ছিল। ঘটনাস্থল থেকে ফাতেমার স্যান্ডেল উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এটি ফাতেমার স্যান্ডেল নয়, ফাতেমার স্যান্ডেল এখনও তাদের বাড়িতেই রয়েছে। পুলিশের প থেকে প্রেমঘটিত ঘটনা বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু খুনির পরিবারের সঙ্গে তার মেয়ে এবং পরিবারের লোকজনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এটিও পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ এ ঘটনায় আপন নামে একজন আসামি দাবি করে ”সে একাই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে” এই মর্মে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করে। কিন্তু ঘটনার পারিপার্শিকতা ও নৃশংসতা দেখে মনে হয়। এই হত্যাকান্ডের পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। ফাতেমা হত্যার পর কয়েকজন যুবক এলাকা ছাড়া ছিল। এমন তথ্যও পুলিশকে দেয়া হয়। ওইদিন মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার সময় সকালে বাড়ির সামনে একটি হাতের ব্যাচলেট ছেঁড়া অবস্থায় পড়েছিল। সেটিও পুলিশকে দেয়া হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে প্রমাণ মিলেছে। সেখানে ধর্ষণের পর নৃশংস হত্যাকান্ডের বিষয়টি স্পষ্ট হলেও এর সঙ্গে জড়িতদের এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। এই জীবনে আর কিছুই চাই না। শুধু আমার আদরের একমাত্র মেয়ে হত্যার বিচার চাই। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খায়রুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি মেডিকেল রিপোর্ট। ডিএনএ রিপোর্ট আসার পরই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here