শোকাবহ ১৯ নভেম্বর মহম্মদপুরে সহোদরসহ তিন বীরযোদ্ধার আত্মবলিদানের দিন আজ

0
221

মুরাদ হোসেন, মহম্মদপুর (মাগুরা) থেকে : মহান মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাসে মহম্মদপুরবাসীর একটি ঐতিহাসিক দিন ১৯ নভেম্বর। দুই সহোদরসহ তিন বীরযোদ্ধার আত্মত্যাগের দিন আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মাগুরার মহম্মদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের বয়াবহ যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে আপন দুই ভাই হাবিবুর রহমান মহম্মদ ও আহম্মদ হোসেনসহ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙ্গালী সৈনিক মহম্মদ আলী পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত হন। মহম্মদপুর বাসীর কাছে এই দিনটি অত্যন্ত বেদনা দায়ক ও নিষ্ঠুরতম। তাই উপজেলা প্রশাসন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় টিটিডিসি (বর্তমান উপজেলা পরিষদ) ভবনে ক্যাম্প স্থাপন করে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে লুটপাট ও নিরীহ মানুষের উপর নির্যাতন ও অত্যাচার চালায় পাকিস্তানি সেনারা। ওই ভবনেই তারা শক্তিশালী পর্যবেক্ষক চৌকি তৈরী করে। পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকাদের এ ক্যাম্পে আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেয় মুক্তিযোদ্ধাদের আলাদা ৪টি সশস্ত্র বাহিনী। আক্রমনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ১৮ নভেম্বর রাতে উপজেলার ঝামা বাজারে সমবেত হন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোমল সিদ্দীকি (বীর উত্তম) এর বাহিনী দক্ষিন কোণে, আবুল খায়ের ও নুর মোস্তফার যৌথবাহিনী উত্তর কোণে, গোলাম ইয়াকুব (বীরপ্রতিক) এর বাহিনী দক্ষিন-পশ্চিমে এবং আহম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা উত্তর-পূর্বকোণে অবস্থান গ্রহন করেন। ঝামা বাজার থেকে আসতে দেরী হওয়ায় ফজরের নামাজের আগমূহুর্তে পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকারদের ক্যাম্পে আক্রমন চালান আহম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা। শুরু হয় গুলাগুলি। দীর্ঘক্ষণ দুপক্ষের তুমুল যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক গুলিবর্ষণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন। এমন সময় একটি গুলি আহম্মদ হোসেনের মাথায় বিদ্ধ হয়। বড় ভাই মহম্মদ হোসেন ছোট ভাইকে বাঁচাতে ছুটে যাওয়ার সময় তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। দুই ভাই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে গড়িয়ে পুকুরের পানিতে পড়ে যান এবং সেখানেই শহীদ হন। এর অল্প সময়ের ব্যাধানে মহম্মদ আলী (ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙ্গালী সৈনিক) শহীদ হন। শহীদ সহোদর আহম্মদ, মহম্মদ ও মহম্মদ আলীকে নাগড়িপাড়া গ্রামের কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়। তাঁরা দুই সহোদর ওই গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে। তাই দিনটি উপলক্ষে শহীদদ্বয়ের কবর জিয়ারত ও স্বরণ সভা করেন উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এছাড়াও পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলার নাগড়িপাড়া গ্রামে কোনআনখানি, মিলাদ ও দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করা হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সহোদরের আত্মত্যাগ চিরকাল স্বরণ রাখতে উপজেলা সদরে ‘শহীদ আহম্মদ-মহম্মদ মার্কেট’, আহম্মদ মহম্মদ সড়ক ও তাদের স্মৃতিস্থাম্ব তৈরী করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here