জি এ গফুর, পাইকগাছা : পাইকগাছার সুন্দরবন সংলগ্ন গড়ই খালী ইউনিয়নে বিশুদ্ধ খাবার পানি উৎস রক্ষনা বেক্ষনের কাজ করে ঘুরে দাড়িয়েছে স্বামী পরিত্যাক্তা শেফালী। সে উপজেলার বাসাখালী গ্রামের হত দরিদ্র খালেক সানার মেয়ে। পিতার অভাব অনাটনের কারণে এস এস সি পর্যন্ত পৌছাতে পারেনি শিফালী। পিতা অভাবের মধ্য তাকে বিয়ে দেয় একই এলাকার মহাসিন সানার সাথে। সেখানে ৩ সন্তানের মা হন শেফালী। শিফালী জানায়, তার পিতার একটু জমি বিক্রিকরে বিদেশে পাঠায় মহসিনের। বিদেশে যাওয়ার পর প্রথম কিছুদিন স্বামী মহাসিন খোঁজ নিলেও পরবর্তীতে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় । এক পর্যায়ে মহসিন বৈবাহিক বিচ্ছেদ করে। ৩টি সন্তান নিয়ে দুঃসহ জীবন কাঁটতে থাকে শেফালী। কি করবে কোন কুল কিনারা পাচ্ছিলনা সে। যে টুকু জমি ছিলো সেটু বিক্রি করে স্বামীকে বিদেশে পাঠায়।
এদিকে উপকুলীয় জনগোষ্ঠীর নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা মোকাবেলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছা এবং সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর সহ ৫টি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নের ১০১টি ওয়ার্ডে বাস্তবায়িত হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি প্রকল্প। লবণাক্ততা মোকাবেলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য নারীদের বিশুদ্ধ খাবার পানির সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করণের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকল্প এলাকা পাইকগাছায় স্থানীয় বাস্তবায়নকারী সংস্থা দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র মাধ্যমে অত্র এলাকার উপকারভোগীদের জন্য ৩ হাজার ২১২টি বসতবাড়ী ভিত্তিক বিশুদ্ধ খাবার পানির উৎস স্থাপন করা হয়। এ সব উৎস সচল রাখার জন্য জিসিএ প্রকল্প হতে প্রতিটি ওয়ার্ডে কাজের পরিধি অনুসারে কমপক্ষে একজন নারী উদ্যোক্তা নির্বাচন করা হয়েছে। এই রক্ষণাবেক্ষণ নারী সেবাদানকারীকে জিসিএ প্রকল্প পানি আপা নামে অবহিত করেছে। যিনি নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে রক্ষণাবেক্ষণ সেবা ও পরামর্শ প্রদান করবেন। অত্র প্রকল্পের আওতাধীন গড়ইখালী ইউনিয়নের ৩ ও ৭ নং ওয়ার্ড। এ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে পানি আপা হিসেবে নির্বাচিত করা হয় শেফালীকে। জিসিএ প্রকল্প থেকে শেফালীকে বিভিন্ন ধরণের অরিয়েন্টেশন প্রদান করা হয়। বাসাখালী, হোগলারচক ও কেচকিবুনিয়া সহ ৩টি গ্রাম নিয়ে ৩নং ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে ৪শ পরিবারের বসতবাড়ীতে বসতবাড়ী ভিত্তিক বিশুদ্ধ খাবার পানি উৎস স্থাপন করা হয়। এ সব উৎসে রক্ষণাবেক্ষনের কাজ ও সেবা প্রদান করা বাবদ প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে সম্মানি ফি বাবদ ২০ টাকা করে পান শেফালী। এতে এক দিকে পানির উৎসগুলো যেমন টেকসই হচ্ছে এবং সচল থাকছে তেমনি অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাড়িয়েছে শেফালী।
যে শেফালীর অনাহারে দিন কাটতো, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো আজ সে শেফালী এক জন স্বাবলম্বী নারী। এলাকার সবার কাছে ‘পানি আপা’ হিসেবে একনামেই পরিচিত। বাসাখালী গ্রামের উপকারভোগী ফরিদা বেগম জানান, পানি আপা শেফালীর মাধ্যমে আমাদের পানির উৎসগুলো সচল রয়েছে। আমরা তার মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংরক্ষণের অনেক ধারণাও লাভ করছি। একটা সময় পানির জন্য হাহাকার ছিল। এখন আর পানি নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই।
শেফালী জানান, এক সময় আমার সংসার চালাতে গিয়ে খুব হিমশিম খেতে হতো। সবাই যখন পানি আপা বলে ডাকে তখন নিজের মধ্যে দারুণ একটা ভাললাগা কাজ করে। বর্তমানে সুন্দরভাবে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেদের ভালভাবে লেখাপড়াও করাচ্ছি। এখন আমার সংসারে অভাব অনটন নেই বললেই চলে।