স্পাইডারম্যানে যশোরের মেয়ে আলভী

0
388

নিজস্ব প্রতিবেদক: আলভী। যশোরের মেয়ে। শৈশব-কৈশোর কেটেছে এ শহরেই। এ শহরেই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। আলভী বরাবরই চঞ্চল, তার দূরন্তপনায় পরিবারের সবাইকে নাকানি-চুবানী খেতে হতো। সেই আলভী এখন পরিবার নয়, সবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। আলভীর পোশাকি নাম আফসারা তাসনীম।

আলভী যশোর বিএএফ শাহীন স্কুল এন্ড কলেজে পড়েছেন। ছোটবেলা থেকেই স্পাইডারম্যানের ভক্ত ছিলেন। এপ্রিলে মুক্তি পাবে তার ‘মর্বিউস’। সনি পিকচার্সের স্পাইডারম্যান ইউনিভার্সের তৃতীয় ছবি। তাতে কাজ করেছেন যশোর তথা বাংলাদেশের মেয়ে আলভী-পোস্ট-প্রডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে। ‘স্পাইডারম্যান’ দেখে আলভী বিমোহিত হয়ে গেল। একদিন তাই সোজা মাকে গিয়ে বললেন, ‘মা, দেখো, আমি একদিন কলম্বিয়া পিকচার্সে কাজ করব।

তবে তেমন স্বপ্ন তো কতজনই দেখে। বাস্তবে ধরতে পারে কজন? সিনেমার প্রতি তত দিনে তাঁর ভালোবাসা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। সে জন্য অবশ্য তাঁর বাবা মেসবাহুল হাসান ও মা আফরিনা পারভীনেরও কৃতিত্ব আছে। ‘নিজেদের অজান্তে তাঁরাই আলভীর মধ্যে সিনেমার বীজ বপন করে দিয়েছিলেন।

ছোটবেলায় তাঁরা মেয়েকে বড় পর্দায় ছবি দেখাতে নিয়ে যেতেন। মা-বাবার সঙ্গে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’ দেখেছেন। তার মা সত্যজিৎ রায়ের কথা খুব বলতেন। তিনি কিভাবে ছবির কাজ করতেন সেসব গল্প করতেন। তাঁর সঙ্গে আলভী ‘অপুর সংসার’,‘সোনার কেল্লা’ দেখেছে। এতে যেটা হয়েছে, ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে গল্প বলার একটা প্যাশন তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

তাঁর জন্ম খুলনায়। তবে শৈশব কেটেছে যশোরে। নানাবাড়িতে। খুব দুরন্ত ছিলেন। একটু বড় হলে দুরন্ত এই কিশোরীকে ভর্তি করা হয় খুলনার এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুলে। পরে ভর্তি হন বিএএফ শাহীন স্কুলে। তারপর মায়ের হাত ধরে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৩ সালে। সুযোগ আসে তাঁর স্বপ্নের পথে হাঁটার। প্রথমে অবশ্য ভর্তি হয়েছিলেন বাংকার হিল কলেজে। ২০১৪ সালে। তবে সেটা লক্ষ্য ছিল না। তাই বছরের শেষদিকে আবেদন করেন বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়, ইউম্যাস বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় ও এমারসন কলেজে। আগে ডাক আসে বোস্টন থেকে। ভর্তি হয়ে যান মিডিয়া আর্টস প্রডাকশনে। কিন্তু তার পছন্দ ছিল এমারসন কলেজ। সেখান থেকে চিঠি আসলে বোস্টনে ভর্তি বাতিল করে দেন। ২০১৫ সালে ভর্তি হন এমারসনে।

তার এই সিদ্ধান্তে অবশ্য মা-বাবা খুব একটা খুশি হননি। তাঁরা জানতেন, আলভী তার ইচ্ছার বাইরে কিছুই করবে না। মা-বাবা আলভীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতেন না।

তা করবেন না-ই বা কেন! তাঁদের মেয়ে যে এগিয়ে গেছেন বহুদূর। ছুঁয়ে ফেলেছেন তাঁর স্বপ্ন। কাজ করছেন সনি পিকচার্সে। সেই যে ছোটবেলায় ‘স্পাইডারম্যান’ দেখে বলেছিলেন, কলম্বিয়া পিকচার্সে কাজ করবেন। সেটা তো সনিরই অধীনে। স্বপ্ন ছোঁয়ার সে যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালে। শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরু করেন সনিতে। প্রস্তাব পান ‘ফাদারহুড’-এ কাজ করার। স্নাতক শেষ করেই যোগ দেন ছবিটির পোস্ট-প্রডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে। পরের বছর আসে আরো বড় সুযোগ। পিয়েত্র স্কেলিয়ার সঙ্গে কাজ করার। আলভীর প্রিয় চিত্র সম্পাদক, যাঁর হাতের জাদুর সাক্ষী ‘জেএফকে’, ‘লিটল বুদ্ধা’, ‘গ্যাডিয়েটর’, ‘অ্যামেরিকান গ্যাংস্টার’, ‘দ্য অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান’, ‘দ্য মার্শিয়ান’, ‘সলো : এ স্টার ওয়ারস স্টোরি’র মতো ছবিগুলো। আলভী জানান, ‘তাঁকে কাজ করতে দেখাটাও স্বপ্নের মতো ব্যাপার!’ এবং সেটাও সনির স্পাইডারমান ইউনিভার্সের ছবিতে! ‘মর্বিউস’-এ। ‘ভেনম’ ও ‘ভেনম : লেট দেয়ার বি কার্নেজ’-এর পর এই ইউনিভার্সের তৃতীয় ছবি ‘মর্বিউস’।
এখনো স্বপ্নের সবটুকু পূরণ হয়নি তাঁর। পোস্ট-প্রডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নয়, কাজ করতে চান চিত্র সম্পাদক হিসেবে। স্পাইডারম্যানের ছবিতে। অবশ্য অন্য একটা স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে গেছেন অনেকটাই। তাঁর ‘কা-ারী’ নিয়ে।

সংগঠনটির যাত্রা শুরু ২০২০ সালে। করোনা মহামারি যখন সারা বিশ্বে আঘাত করেছে, সবচেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছিল মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। শুরুতে তাদের মাঝে খাবার পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন আলভী। তার সব সময় ইচ্ছা ছিল সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কিছু করার। সে লক্ষ্যেই কাজ করছে কা-ারী। গ্রামের, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চল ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে। এর মধ্যেই তারা একটি স্কুল ও দুটি গ্রন্থাগার তৈরি করেছে।

আসছে এপ্রিলেই মুক্তি পাবে আলভীর ‘মর্বিউস’। এর মধ্যেই নতুন কাজে হাত দিয়েছেন তিনি। ওই পোস্ট-প্রডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেই। টিভি-সিরিজ ‘ওবি-ওয়ান কেনোবি’তে। স্টার ওয়ারসের চরিত্রকে নিয়েই। ‘রিভেঞ্জ অব দ্য সিথ’-এর ১০ বছর পরের গল্প। আসছে মে থেকে দেখা যাবে ডিজনি প্লাসে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here