শৈলকুপায় ১টা তরমুজের দামে মিলছে ১মণ পেঁয়াজ-রসুন

0
146

শৈলকুপা(ঝিনাইদহ)থেকেঃ ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ধ্বস নেমেছে পেঁয়াজ-রসুনের বাজারে। এখন চলছে মসলা জাতীয় এই ফসল উত্তোলন ও কেনা-বেচার ভরা মৌসুম। তবে চাষী সহ ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের কপালে ভাজ পড়েছে পেঁয়াজ-রসুনের দাম নিয়ে। বাজারে উঠেছে মৌসুমী ফল তরমুজ, তবে এক একটা বড় সাইজের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫’শ টাকা দরে। অন্যদিকে বাজারে ১মণ পেঁয়াজ-রসুনও বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫’শ টাকা মণ দরে। প্রকারভেদে অবশ্য পেঁয়াজ ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা মণ দরেও বিক্রি হচ্ছে তবে রসুন বিক্রি হচ্ছে আরোও কম দামে। ২’শ থেকে ৩’শ টাকা মণ আবার সর্বোচ্চ ৫’শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কোন কোন হাটে রসুনের দামই পাচ্ছে না চাষী এবং ব্যবসায়ীরা, সেেেত্র ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা হিসাবে খ্যাত ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা। শৈলকুপা উপজেলার লাঙ্গলবাধ,হাটফাজিলপুর,শিতালী,নাগিরহাট,রেয়ড়া,গাড়াগঞ্জ,খুলুমবাড়িয়া,কাতলাগাড়ী,কচুয়া,
শেখপাড়া,ভাটই বাজার সহ বিভিন্ন বাজারে এমন দৃশ্য দেখা গেছে । গত বছর শৈলকুপায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও এবার প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে ফলন এমনিতে কম হয়েছে। মাঠ থেকে পেঁয়াজ বাড়িতে এনে কাটা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা সহ বাজারজাত ও ঘরে রাখা নিয়ে কৃষকদের দুঃশ্চিন্তার অন্ত নেই। শৈলকুপা সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার ভেতরে শৈলকুপা উপজেলায় সবচেয়ে বেশী পেঁয়াজ চাষ হয়। এই উপজেলার মাঠের পর মাঠ শুধুই পেঁয়াজ। জেলার ১০হাজার হেক্টর জমির পেঁয়াজের মধ্যে এখানেই এবার চাষ হয়েছে ৮হাজার ৪শ ৫হেক্টর জমিতে। দেশের পেঁয়াজের চাহিদার বড় একটি অংশের যোগান হয় শৈলকুপা থেকে। শৈলকুপাতে সাপ্তাহিক শনি ও মঙ্গলবার দুটি হাট বসে পেঁয়াজের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার ও ব্যাপারীরা একদিন আগেই চলে আসে শৈলকুপাতে, তারা ট্রাকে ভর্তি করে পেঁয়াজ নিয়ে যায় ঢাকার কারওয়ান বাজার, ভৈরব, সিলেট, চট্রগাম, খুলনা, বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজের ছড়াছড়ি। পাইকপাড় গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পেঁয়াজ,েেতও রয়েছে। কৃষকেরা বাড়িতে এনে স্তুপ করে রাখছেন বিক্রির আশায়। তবে পেঁয়াজ সংরণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বেশীর ভাগ পেঁয়াজ তুলেই বিক্রি করতে বাধ্য হন উপজেলার কৃষকরা। এদিকে শৈলকুপা কৃষি অফিস জানিয়েছে, উপজেলায় চাষযোগ্য মোট জমি আছে ২৮ হাজার ৫শ হেক্টর। তারমধ্যে এ বছর পেঁয়াজের চাষ হয়েছে ৮হাজার ৪শ ৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে শুধু পাইকপাড়া গ্রামে চাষ হয়েছে ৩৫০ হেক্টর জমিতে। এবছর বারি-১, লাল তীর, লাল তীর কিংসহ বেশ কয়েকটি জাতের পেঁয়াজ বেশি চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে এ উপজেলায় পেঁয়াজ সংরণের কোন ব্যবস্থা নেই। যে কারণে কৃষকরা পেঁয়াজ সংরণ করতে পারেন না। তাই সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। শৈলকুপার পেঁয়াজ ব্যাবসায়ী রেজাউল বিশ্বাস জানান, দেশের চাহিদার বড় একটি অংশের যোগান শৈলকুপা থেকে হয়ে থাকে। লাঙ্গলবাধ বাজারের পেঁয়াজ ব্যাবসায়ী রাম কুন্ডু জানান, রবি ও বৃহস্পতিবার বাজারে ১০ থেকে ১২ হাজার মন পেঁয়াজ বিত্রি হয়ে থাকে। তা কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করে থাকি। উপজেলার পাইকপাড়া বøকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কোরবান আলী জানান, এ বøকে ৪’শ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এখানে ১৫৬০টি কৃষি পরিবার রয়েছে। কম-বেশি প্রায় সব পরিবারে জমিতে রয়েছে পেঁয়াজ । চাষটি ক্রমেই বাড়ছে বলে তিনি জানান। পেঁয়াজের এমন দুরাবস্থার পাশাপাশি আরেক মসলা জাতীয় ফসল রসুন নিয়েও বিপাকে পড়েছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে এখন চায়না থেকে আমদানী করা চায়না রসুনের ছড়াছড়ি। এই রসুন মনপ্রতি ১৫ থেকে ১৬শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশীয় পুরাতন রসুন যেন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন কোন বাজারে পুরাতন রসুন ২’শ থেকে ৩’শ টাকা মন দরে আবার কোথাও ফেলে দেবার ঘটনাও ঘটছে। বাজারে এখন মৌসুমী ফল তরমুজ এক একটি বিক্রি হচ্ছে ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা করে। ফল ব্যবসায়ী বাকুল বিশ^াস, বাবলুর রহমান জানান, তরমুজের দাম একটু চড়া। ফল আর ফসলের দাম সমান হওয়ায় তা যেন হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে । শৈলকুপা বাজারে পেঁয়াজ বিত্রি করতে আসা কুশবাড়িয়া গ্রামের আতিয়ার খাঁন জানান, এক মন পেঁয়াজ বিক্রি করে একটি তরমুজ কেনা যাচ্ছে না। পেঁয়াজের দাম এমন হলে পরের বছর থেকে আর পেঁয়াজ চাষ করবো না। শৈলকুপা বাজারের পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী মশিউর রহমান, শরিফুল ইসলাম বলেন, রসুন-পেঁয়াজের কোন দাম নেই, অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে এসব ফসল। শৈলকুপা উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সোবহান জানান, ১মণ রসুন বিক্রি করে সেই টাকায় ১টি তরমুজও কেনা যাচ্ছে না। বাজারে অনেক ব্যবসায়ী রসুন ফেলে দিচ্ছে। তিনি দাবি জানান দ্রæত রসুন ও পেঁয়াজের এলসি( আমদানী) বন্ধ করতে হবে। শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, এ উপজেলায় ক্রমেই পেঁয়াজের চাষ বাড়ছে। এবার অবশ্য প্রাকৃতিক কারণে উপজেলায় পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়নি। আর পেঁয়াজের দাম নিয়ে কৃষকদের হতাশা প্রসঙ্গে বলেন, চাষীদের উচিৎ পেঁয়াজ কিছুদিন সংরণ করা। পেঁয়াজ-রসুনের দাম কমের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপকে জানানো হয়েছে বলে জানান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় প্রতি বছর পেঁয়াজ চাষের লমাত্রা ধরা হয় প্রায় ১০হাজার হেক্টর জমিতে তবে চাষ হয় লমাত্রার চেয়েও বেশী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here