শেখ সিরাজউদ্দৌলা লিংকন, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি,আগাছার সমস্যা রোধে মালচিং এক কার্যকরী ক্লাইমেট স্মার্ট পদ্ধতি। উপকূলের প্রায় সর্বত্র সবজি চাষে আগাছা একটি বড় সমস্যা আজকের বাজারে সবজি থেকে লাভ পেতে চাষিরা ফসল ফলাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। শেচ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় উপকূলের এখনো অনেক জমি খালি পড়ে থাকে এছাড়া আগাছা নাশে শ্রম কমাতে অনেকেই জমিতে মৌসুমের শুরুতেই আগাছা নাশক বিষ প্রয়োগের ফলে জমির অবস্থা খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে আর পরিবেশে মিশছে বিষ। আগাছার সমস্যা রোধে মালচিং এক কার্যকরী ক্লাইমেট স্মার্ট পদ্ধতি। এর জন্য যেমন দেশীয় ব্যবস্থায় মাল্চ ব্যবহার করা যায় তেমন আধুনিক পদ্ধতিতে পলিমাল্চ
জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় কয়রা কৃষি অফিসের আর্থিক সহায়তা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে কয়রা উপজেলা সদরের দুই নম্বর কয়রা গ্রামের কৃষক মাহফুজুর রহমান, পলি মাল্চের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের সবজি চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তার বসত বাড়ির আঙিনায় 25 শতক পতিত জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মাটিতে বিশেষ ধরনের পলিথিন দিয়ে বেড গুলো ঢাকা তার ওপর টমেটো গাছের সারি, গাছ গুলিতে ফুল এসেছে, এবং উপরে বাশের মাচাংয়ের উপর স্বচ্ছ পলিথিনের ছাউনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ এলাকায় খরিপ মৌসুমে টমেটো চাষ করতে হলে প্রথমত গাছ গুলোকে বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা করতে পারলে আশানুরূপ ফলন পাব। তাছাড়া এলাকায় এ ধরনের ফসল উৎপাদন সম্ভব কিনা তাও জানা যাবে,তাছাড়া মেইন রাস্তার ধারে নতুন এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় রাস্তায় চলাচল কারী মানুষ অনেক উৎসাহ নিয়ে এ সম্পর্কে জানতে চায় জানার পর তারাও এধরনের চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। প্রকল্প স্থাপনের খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন কৃষি অফিস থেকে বীজ সার ও পলিমাল্চ দিয়েছে বাঁশ ও ওপরের পলিথিন ক্রয় বাবদ 20 হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া লেবার কষ্ট অন্যান্য তো আছেই, তবে গাছের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে অন্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ লাভ হবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, উপসহকারী কৃষি অফিসার অনুতাপ সরকার ফসলের ক্ষেতে সশরীরে উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক দিক নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো: আসাদুজ্জামান বলেন, ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন প্রকল্পের মাধ্যমে অত্র এলাকায় জলবায়ু উপযোগী ফসলের জলবায়ুর অভিঘাত সহনশীল জাত নিরূপণ, ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিতে সাথী ফসল, টাওয়ার ও বস্তায় ফসল এবং অ-মৌসুমে উচ্চমূল্যের সবজি চাষের উপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা কৃষকের পতিত জমিতে চাষাবাদে আগ্রহী করে তোলার জন্য এ ধরনের প্রকল্প কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তিনি আরো বলেন এই পদ্ধতিতে অ-মৌসুমে সবজি চাষ করে পৃথিবীর অনেক দেশ বিশেষ করে ভারত প্রতিবছর নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর সবজি মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে, আমাদের চাষীদের যদি সবজি চাষের এই কৌশল সম্পর্কে সচেতন করা যায় তাহলে আমরাও নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবো।
এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় এ ধরনের প্রকল্প ব্যয়বহুল হওয়ায় কৃষি অফিস থেকে কারিগরি পরামর্শের পাশাপাশি স্বল্প মুনাফায় সহজ শর্তেঋণ সুবিধা পেলে কৃষকরা আরো আগ্রহী হবে।