চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি ॥ যশোরের চৌগাছার তরুন উদ্যোক্তা কৃষক রুহুল আমিন এবছরও ড্রাগন চাষে ব্যাপক সাফল্য পাবেন বলে আশা করছেন। গত বছরে দুই বিঘা জমিতে প্রায় ১৪ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করেন। এবছর প্রতিটি গাছে যে পরিমান ফুল এসেছে তাতে গত বছরের থেকে বেশি ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আঙ্গুরের পর ড্রাগনে সাফল্য পাওয়া কৃষক রুহুল আমিনকে অনেকেই অনুসরণ করতে শুরু করেছেন।
চৌগাছা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বেলেমাঠ গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন। নিজের জায়গা জমি না থাকলেও পরের জমি লিজ বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। গত কয়েক বছর তিনি অন্য ফসলের চেয়ে ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। ড্রাগন, কুল আঙ্গুরসহ বেশ কিছু ফলের চাষ করে সে সাফল্যও পেয়েছেন। গত বছরে দুই বিঘা জমি হতে ড্রাগন বিক্রি করে ব্যাপক সাফল্য পেয়ে এবছর তিনি আরও দুই বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন। ড্রাগনের পাশাপাশি চাষ করেছেন আঙ্গুর। মিষ্টি আঙ্গুর চাষে সে অন্য যে কোন ফসলের চেয়ে বেশি লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
গতকাল (৭জুন) খুব সকালে কৃষক রুহুল আমিনের ড্রাগন বাগানে যেয়ে দেখা যায়, তারার মত সাদা ফুল ফুটে আছে সমুদয় জমিতে। পাতাবিহীন লতা গাছে সাদা ফুল এক অন্য রকম সৌন্দর্য বহন করছে। মৌমাছির গুনগুন শব্দ সেই সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে গোটা ক্ষেত জুড়ে। কৃষক রুহুল আমিন ভোর হতেই জমি পরিচর্জায় ব্যস্ত আছেন। এসময় কথা এই তরুন উদ্যোক্তার সাথে। তিনি বলেন, স্বপ্ন আছে বলেই মানুষ বেঁচে আছেন। আমার কোন চাষাবাদের জমি নেই কিন্তু স্বপ্ন ছিলো আকাশসম। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অন্যের জমি লিজ বর্গা নিয়ে ফল চাষে মনোযোগী হয়ে উঠি। প্রথম বছরেই পাই সাফল্য। যার করনে এ বছর নতুন ফল আঙ্গুরের চাষ করার পাশাপাশি আরও দুই বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছি। আগে লাগানো ড্রাগন বাগান এবছর প্রচুর ফুল এসেছে। আশা করছি ফলও অনুরুপ ভাবে আসবে। আর নতুন লাগানো গাছ আগিমে ফল দিবে। আঙ্গুর ও দুই বিঘা জমিতে নতুন ভাবে ড্রাগন চাষ করে কিছুটা অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যায়। এ সময় চৌগাছা সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমার ক্ষেত পদির্শন করে চলতি সপ্তাহে দুই লাখ টাকা ঋন দিয়েছেন। ব্যাংকের ঋন পাওয়ার পর কাজের গতি যেন আরও বেড়ে গেছে। ফল চাষে এ অঞ্চলে তিনি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান। সে কারনে উপজেলা কৃষি অফিস সহ সংশ্লিষ্ঠদের সার্বিক সহযোগীতা কামনা করেন।
কৃষক রুহুল আমিন বলেন, এখন ড্রগনের ফুল আসার ভরা মৌসুম। প্রতিটি গাছে ফুলে ভরে উঠেছে। ড্রাগনের ফুল মুলত রাতের আঁধারে ফোটে। সূর্যের আলো উঠা মাত্রই তা বন্ধ হয়ে যায়। এই অল্প সময়ের মধ্যে মৌমাছি ফুলের উপর যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। মৌমাছির পরাগয়নের সাথে সাথে আমি নিজেও পুরুষ ফুল দিয়ে পরাগয়ন করি। গত বছরের থেকে চলতি বছরে বেশি টাকার ড্রাগন বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।
সূত্র জানায়, রাতের রানী ড্রাগন ফুল। ড্রাগন গাছে শুধুমাত্র রাতে ফুল দেয়। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়। অনেকটা ’নাইট কুইন’ ফুলের মত। এ কারনে ড্রাগন ফুলকে ’রাতের রানী’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। দক্ষিন এশিয়া বিশেষ করে মালায়েশিয়াতে ড্রাগন ফলের প্রবর্তন করা হয় বিংশ শতাব্দির শেষের দিকে। তবে ভিয়েতনামে এ ফল সর্বাধিক বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয়। বর্তমানে এ ফলটি দক্ষিন আমেরিকা, দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া, চীন, মেক্্িরকো, থাইল্যান্ডসহ বাংলাদেশেও চাষ করা হচ্ছে।