স্টাফ রিপোর্টার : যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়ায় গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি অনিবন্ধিত ক্লিনিকে অবহেলায় সিজারিয়ান অপারেশনকালে প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নিহতের স্বজনরা ক্লিনিকে ভাংচুর চালিয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ ঘটনায় ক্লিনিকের কর্মীরা পালিয়ে গেলেও রোগী নিয়ে আসা দালালকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
রিমা খাতুনের ভাই তানভীর হোসেন জানান, সোমবার রাত ৩টার দিকে নরেন্দ্রপুরের সালমা নামের একজনের পরামর্শে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করান বোনকে। ঘটনা চক্রে জানতে পারি ওই মহিলা গ্রামীণ ক্লিনিকের নিযুক্ত দালাল। কিছু টাকার বিনিময়ে আমার বোন রিমা’কে কৌশলে উক্ত ক্লিনিকে ভর্তি করেন। প্রসূতি রিমা খাতুনের স্বামী আন্দুলিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম সহ পরিবারের সদস্যরা দৈনিক যশোর’কে বলেন ঘটনার দিন রাত ৩টার দিকে রিমা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে দ্রুত রূপদিয়া বাজারে অবস্থিত গ্রামীণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পরপরই সিজার করেন ওই ক্লিনিকে ব্যবস্থাপক ডাক্তার নুরছালি তুলি। সিজারের মাধ্যমে রিমার পুত্র সন্তানের জন্মদেন। কিন্তু সেজার অপারেশনের পর রিমার আর জ্ঞান ফেরেনি । সেজারের পূর্বে স্বজনদের রক্তের প্রয়োজন বলেও জানায়নি। পরে ৭ ব্যাগ ও পজেটিভ রক্ত দেয়া লাগবে বলে জানান। রিমার স্বামী রফিকুল ইসলামের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসায় তার স্ত্রী সিজারের সময় মারা গেছে। অপারেশনকালে প্রসূতি মারা গেলে কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে রক্তস্বল্পতার কারণে জ্ঞান ফিরছে না জানিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। স্বজনেরা তাকে খুলনায় নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান, রোগী অনেক আগেই মারা গেছে। মারা যাওয়ার সংবাদে স্বজনরা ক্লিনিকে গিয়ে তালা ঝুলানো দেখতে পায়। পরবর্তীতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নবজাতক ছেলে সন্তানটি মারা গেলে স্বজনরা ওই ক্লিনিকে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ ক্লিনিকের দালাল চক্রের সদস্য নরেন্দ্রপুর গ্রামের এক নারী ১২শ’ টাকার বিনিময়ে রিমাকে সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কৌশলে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করে। পরে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশন করেন ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক নুরছালী তুলি। রিমা বেগমের স্বামী রফিকুল ইসলাম জানান, ভুল চিকিৎসার কারণে রিমা সিজার করার সময় মারা গেছে। সিজারিয়ান অপারেশনের পরে রিমা বেগম বেঁচে আছে বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ভুল বুঝিয়ে ক্লিনিকে তালা মেরে দেয় এবং খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরবর্তীতে সেখানে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক বলেন, রিমা অনেক আগেই মারা গেছেন। আর দুপুরে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় নরেন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মিহির মন্ডল বলেন, প্রসূতির মৃত্যুর পর স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের লোকজন গ্রামীণ ক্লিনিক ঘেরাও করে। এ সময় ক্লিনিকের লোকজন তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায়। পরে নবজাতকের মৃত্যুর খবর পেলে এক পর্যায়ে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা ভাংচুর করে। পরে পুলিশের একটি টিম নিয়ে আমরা সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। তিনি আরও বলেন, পরিবার যেহেতু ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ করছে সেহেতু লাশ উদ্ধার করে আমরা ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। এদিকে, প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর খবর পেয়ে অনিবন্ধিত গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেলসহ স্বাস্থ্য প্রশাসনের একটি টিম। কিন্তু এর আগেই ক্লিনিক সংশ্লিষ্টরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল জানিয়েছেন, ২০২০-২১ সালের পর গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের ওই ক্লিনিকটি নিবন্ধনের কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তাই নিবন্ধনহীন ওই ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের পর যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এদিকে ক্লিনিকের কর্মীরা পালিয়ে গেলেও পুলিশ রোগী নিয়ে আসা দালালকে হেফাজতে নিয়েছে। নরেন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই মিহির কুমার মন্ডল বলেছেন ,মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।