বন্ধ থাকা সেচ যন্ত্রে পল্লি বিদ্যুতের ‘ভুতুড়ে’ বিল, অতিষ্ঠ গ্রাহকরা

0
56
এইচ এম জুয়েল রানা স্টাফ রিপোর্টার : মনিরামপুরের রঘুনাথপুর গ্রামের বৈদ্যুতিক সেচ পাম্পের মালিক শাহ আলম। এই পাম্পে তিনি নিজেরসহ অন্য কৃষকের ১৬ বিঘা জমিতে সেচ দেন। বোরো মৌসুমের পর সেচ কাজ বন্ধ রেখেছেন দুই মাস। এই কৃষক শুক্রবার সন্ধ্যায় জুন মাসের বিদ্যুৎ বিলের কাগজ পাতে পেয়েছেন। তার বন্ধ থাকা সেচ যন্ত্রে ৮৪৯ ইউনিট খরচ দেখিয়ে ৩ হাজার ৭১০ টাকা বিল করেছে যশোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি সমিতি-২ এর আওতায় রাজগঞ্জ সাব জোনাল অফিস।
শাহ আলমের পাশের সেচ যন্ত্রের মালিক সুলতান জমাদ্দার। তিনি বোরো ও আমন মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে সেচ দেন। এই কৃষকের বন্ধ সেচ যন্ত্রের জুন মাসের ৭৪০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার দেখিয়ে বিল করা হয়েছে ৩ হাজার ২৫২ টাকা।
শাহ আলম বলেন, বোরো মৌসুম শেষ হয়েছে দুই মাস। এরপর একদিনও পাম্পের সুইচ টিপে দেখিনি। মে মাসে ৫০ ইউনিট ব্যবহার দেখিয়ে ৩৫৫ টাকা বিল করেছে। মিনিমাম চার্জ ভেবে সেই বিল শোধ করেছি। শুক্রবার বিকেলে জুন মাসের বিলের কাগজ দিয়ে গেছে। এবারের বিল করেছে ৩ হাজার ৭১০ টাকা।
শাহ আলম বলেন, যখন ধানে পুরোদমে পানি দেওয়ার চাপ ছিল তখন ৩ হাজারের বেশি বিল আসেনি। বোরো ধান ওঠার পর একদিনও মোটরের সুইচ দিয়ে দেখিনি। এবার ৩ হাজার ৭১০ টাকা বিল করেছে। যে লোক বিলের কাগজ দিতে এসেছে তার কাছে কারণ জানতে চাইলাম। তিনি হিসাব মিলাতে না পেরে চলে গেছেন।
শুধু শাহ আলম বা সুলতান নন যশোর পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর রাজগঞ্জ সাব জোনাল দপ্তরের জুন মাসের এমন ভুতুড়ে বিলের কাগজ হাতে পেয়েছেন রঘুনাথপুর গ্রামের প্রভাষ মণ্ডল, বিনোদ রায়, মামুদকাটি গ্রামের নূর ইসলাম, কামরুল হাসান ও নাজিম উদ্দিন।
প্রভাষ মণ্ডলের জুন মাসের বিল দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৯৭ টাকা, বিনোদ রায়ের ১ হাজার ১৫২ টাকা, নুর ইসলামের ১ হাজার ৬১৫ টাকা, কামরুজ্জামানের ৯৮৪ টাকা, নাজিম উদ্দিনের ৫৬৪ টাকা।
নাজিম উদ্দিন বলেন, এবারের বিলের কাগজে অনেক সেচ মালিকের ১০০ ইউনিট খরচ দেখিয়ে বিদ্যুৎ বিল করেছে। আমার মোটর বন্ধ রয়েছে। আমার জুনের বিলে ১০০ ইউনিট খরচ দেখিয়েছে।
কৃষক নুর ইসলাম বলেন, আমি একদিনও মোটর চালাইনি। আমার জুনের বিল ১ হাজার ৬১৫ টাকা এসেছে। নুর ইসলাম আরও বলেন,
নিয়মিত যে লোক মিটারের রিডিং নিতেন, গেল মাসেরটা সে নেয়নি। আমার মিটারে জুনের রিডিং নেছে ইমরান নামের একটি ছেলে। সে খেদাপাড়া অভিযোগ কেন্দ্রের আওতায় কাজ করে। যতদূর জানি ওর চাকরি পারমেট না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইমরান বলেন, জুনে কাজরে চাপ বেশি থাকায় মামুদকাটি, কদমবাড়িয়া ও রঘুনাথপুর গ্রামের সেচের মিটারের বিল আমি তুলেছি। অফিস থেকে ১০০ ইউনিট করে বেশি তুলতে বলেছিল।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশোর পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির এক মিটার রিডার বলেন, পল্লিবিদ্যুতের বিলের মোটা অংকের টাকা ঘাটতি দেখা গেছে। জুন ক্লোজিং-এ সেই ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে আমাদের গ্রাহকের মাসিক ব্যবহারের উপর বাড়তি বিল তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একারণে এমনটি হয়েছে। বাড়তি বিল তুলতে গিয়ে আমদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
এই সূত্রটি বলছে, এছাড়া কর্মী সংকট থাকায় আমাদের কাজের উপর বাড়তি চাপ পড়ছে। এসব কারণে আমরা কয়েকদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।
পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর রাজগঞ্জ সাব জোনাল দপ্তরের এজিএম শাহজাহান বলেন, জুন ক্লোজিংয়ের কারণে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বিলে কিছু সমস্যা হয়েছে। গ্রাহকরা সমস্যা মনে করলে অফিসে আসলে আমরা সমাধান করে দেব।
যশোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার মহম্মদ আব্দুল লতীফ বলেন, পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন অনেকদিন ধরে। এজন্য মিটারের বিল তোলায় সমস্যা হতে পারে। আমরা বিষয়টি দেখব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here