আনিছুর রহমান:- মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা বাঁওড়ে মাছ লুটপাট ও আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে অতিভারী বৃষ্টিজনিত কারণে বাওড় তলিয়ে যাওয়ায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকার মাছের ক্ষতি বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঝাঁপা বাঁওড় পরিচালনা কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঝাঁপা বাঁওড়ের সভাপতি সুধাংশু বিশ্বাস। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সমিতির সদস্য গোপাল, তুহিন, সহ অনেকেই। সভাপতি বলেন, আমরা মণিরামপুর উপজেলাধীন ৬০৫ একর আয়তনের ঝাঁপা বাওড় (বন্ধ) জলমহলটি বাংলা ১৪৩০ থেকে ১৪৩৫ সন পর্যন্ত ৬ বছরের জন্য ইজারাগ্রহণ করে বর্তমান মৎস্যচাষের মাধ্যমে ভোগ-দখল করছে। সমিতি প্রত্যেক ইজারা বর্ষে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা সরকারকে প্রদান করে। ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতির সুযোগ নিয়ে প্রতিদিন বাওড়ের উভয় পার্শ্বের লোকজন জোরপূর্বক মাছ ধরে নিয়েছে। এই ধারাবাহিকতা ১১ তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
এছাড়া ইউনিয়ন, থানা এবং জেলা হতে বাওড়ে দলে দলে দুর্বৃত্তরা মাছ ধরতে এসেছে। সমিতির সদস্যগণ হিন্দু ধর্মের অনুসারী। ৬ তারিখ হতে দুর্বৃত্তদের ভয়ে এই সকল সাধারণ মৎস্যজীবী-হিন্দুরা বাওড়ে নামতে পারেনি। হামলা ও জখমের শিকার হওয়ার কারণে বাওড়ে দায়িত্বরত ৩১ জন গার্ড এবং কর্মকর্তারা কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।
অন্যদিকে, ২৫ই জুলাই থেকে বৃষ্টির পানির কারণে মাছ বাওড়ের কিনারায় কিনারায় ছিল। লুটকারীরা মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ যেমন, খেবলা জাল, হুইল, সিপ, কল, ক্যারেন জাল, চারো ইত্যাদি দিয়ে মাছ ধরেছে। ৬-১১ আগষ্ট পর্যন্ত প্রায় ১৫শ থেকে ২ হাজার মণ মাছ লুট হয়েছে যার বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এদিকে ২১ আগষ্ট হতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অতি ভারী বৃষ্টিসহ বন্যা দেখা দেয়। যশোর অঞ্চলে ২১ থেকে ৩০ আগষ্ট পর্যন্ত ভারী বর্ষণ হয়। বাওড়ের পার্শ্ববর্তী এলাকার ভারী বৃষ্টির পানি বাওড়ে প্রবেশ করে। একই সাথে ঝাঁপা বাওড়ের সাথে যুক্ত কপোতক্ষ নদের পানি বাওড়ে প্রবেশ করে। বাওড় পানিতে তলিয়ে যায়।
আবাদি জমি ও বাড়ি-ঘরে বাওড়ের পানি প্রবেশ করে। অন্যদিকে, বাওড়ের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে কপোতক্ষের সাথে সংযোগকারী খাল ও বাওড়ের পানি একাকার হয়ে যায়। উক্ত পরিস্থিতির অবনতি থাকাবস্থায় ১৪-১৬ সেপ্টেম্বর, পর্যন্ত পুনরায় ভারী বৃষ্টি হয় এবং বাওড় পানিতে তলিয়ে যায়। অতিবৃষ্টির কারণে বাঁওড় তলিয়ে/ভেসে যাওয়ার কারণে বাওড়ের মাছ বের হয়ে গেছে যার কারণে বাওড়ের প্রায় আনুমানিক ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। বাওড়ের সর্বমোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা দাড়িয়েছে।
প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা অভাব এখনও বিদ্যমান রয়েছে, দুর্বৃত্তরা এখনও জোরপূর্বক মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছে। এই অবস্থা চলমান থাকলে জলমহলটি হতে মাছ রক্ষা করা সম্ভব হবেনা; সদস্যগণ ঋণগ্রস্ত হবে, তাদের জীবন-জীবিকার কোন সংস্থান থাকবে না, অর্থ অভাবে আসন্ন বৎসরে খাজনা দিতে পারবেনা। আইন শৃঙ্খলার অবনতি ও অতিভারী বৃষ্টিজনিত কারণে সাধিত ক্ষতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং হত-দরিদ্র মৎস্যজীবীদের জীবন-মানের উন্নয়ন করতে ভূমি মন্ত্রণালয় ও যশোর জেলা প্রশাসকের নিকট সবিনয় নিবেদন করছি।