আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের অভয়নগরে দুর্বৃত্তদের হামালায় ঘাটশ্রমিক নিহত, আহত ২

0
10

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের অভয়নগরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে স্থানীয় দুর্বৃত্তদের হামলায়
একজন ঘাটশ্রমিক নিহত ও দুইজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৯
সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে উপজেলার মশরহাটী গ্রামে ভৈরব সেতু
সংলগ্ন আব্দুল কুদ্দুসের চায়ের দোকানের সামনে রাস্তার ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। শুক্রবার
(২০ সেপ্টেম্বর) সকালে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আকিকুল
ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নিহত মতিয়ার রহমান বিশ্বাস (৪৬) উপজেলার মশরহাটী গ্রামের মৃত হাশেম আলী
বিশ্বাসের ছেলে। তিনি নওয়াপাড়া পৌর হ্যাণ্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য ও বিভিন্ন
ঘাটে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আহত আব্দুল হালিম (৩৫) উপজেলার বনগ্রামের মৃত
মজিদ শেখের ছেলে। তিনি মশরহাটী গ্রামের আবুল হোসেন বাবুর বাড়ির ভাড়াটিয়া ও
একই এলাকার পরশ ঘাটের শ্রমিক সরদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া অপর আহত
মনিরুল ইসলাম লিটন (৪০) একই গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে। তিনি মশরহাটী
গ্রামের পাশে ভাঙ্গাগেট এলাকায় একটি স্টেশনারি দোকানের মালিক। আহত দুইজনকে
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহত মতিয়ার বিশ্বাসের স্ত্রী মিম খাতুন বলেন, ‘রাতের আঁধারে একদল সন্ত্রাসী
দেশিয় অস্ত্র দিয়ে আমার স্বামীসহ তার দুই বন্ধুকে কুপিয়ে মৃত নিশ্চিত ভেবে ফেলে
রেখে চলে যায়। এলাকাবাসী ও পুলিশের সহযোগিতায় রক্তাক্ত জখম তিনজনকে উদ্ধার করে
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মতি বিশ্বাসকে
মৃত বলে ঘোষণা করেন। আহত দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতেই তাদের খুলনা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।’
সরেজমিনে শুক্রবার সকালে মশরহাটী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলের সামনে ও
পাশের একটি আম গাছের নিচে নিহত মতি বিশ্বাসের রক্তমাখা স্যাণ্ডেল পড়ে আছে।
পাশের একটি টিনের ঘরের বারান্দা ও চালে রক্তের ছাপ ফুটে রয়েছে। নিহত ও আহতদের
পরিবারের চলছে শোকের মাতম। থমথমে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পূর্বশত্রুতা ও এলাকায় আধিপত্য
বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলে আসছিল।
তারই জের ধরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কুদ্দুসের চায়ের দোকানের সামনে ১৫-২০ জনের
একটি সশস্ত্র দল মতি ও তার দুই সহযোগির ওপর হামলা চালায়। এসময় হামলাকারিরা
ধারালো অস্ত্র দিয়ে মতি ও তাঁর দুই সহযোগির শরীরের বিভিন্ন অংশ কুপিয়ে জখম করে।
এক পর্যায়ে মতির পেটের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসলে তাকে মৃত ভেবে অস্ত্রধারিরা ফেলে
রেখে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে অভয়নগর থানা পুলিশ রক্তাক্ত জখম অবস্থায় তিন জনকে উদ্ধার
করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য ওই
রাতে শেখপাড়া মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। অথচ ওই
রাতে মশরহাটী গ্রামের কোনো বাড়ি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চুরি বা ডাকাতির মত
কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আকিকুল ইসলাম বলেন,
‘রাতে খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত তিন জনকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে
নেয়ার পর একজনকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তার। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর
মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহত অপর দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা
মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হামলা ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে
পুলিশ কাজ শুরু করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিহত
ও আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here