যশোরে স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মতিথি উৎসবে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম প্রকৃত ধার্মিক হতে হলে কুপমন্ডুকতা পরিহার করতে হবে

0
22

যশোর অফিস : যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেছেন, কুপমন্ডুকতা পরিহার না করতে পারলে ধর্ম এবং ধর্মের দর্শন উপলব্ধিকরা যায় না। নামে ধার্মিক নয় সার্বিক ভাবে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। ধার্মিক হওয়ার উদ্দেশ্য হল স্রষ্টার আনুগত্য করা। তার নির্দেশিত পথে চলা। আর স্রষ্টার পথই হল কল্যাণের পথ। কল্যানের পথে যে থাকে তার দ্বারা অকল্যাণ হওয়া মোটেই সম্ভব নয়। যদি ব্যত্যয় হয় বুঝতে হবে সে ধার্মিক নয়। সৃষ্টিকর্তা একজন মানুষের মধ্যে ততটুকুই শক্তি দিয়েছেন যে টুকু তার মধ্যে থাকা দরকার। সে শক্তি যদি তিনি পরিপূর্ণ রুপে ব্যবহার করতে পারেন তা হলে সে আদর্শ মানুষ হিসিবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন। আর এ জন্য প্রয়োজন নিজের জ্ঞান চক্ষুর দ্বার উন্মোচন করা। আর এভাবেই পরিশুদ্ধ একজন ধার্মিক সমাজের মঙ্গল সাধনে নিবেদিত হতে পারবে।
যশোরে স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩তম জন্মতিথি উৎসব উপলক্ষে রামকৃষ্ণ আশ্রম ও শিশন আয়োজিত উৎসবের আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) ভোরে মঙ্গলারতির পর বেদমন্ত্র পাঠ ও প্রার্থনা, বিশেষ পূজা, হোম ও পুষ্পাঞ্জলির মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু হয়। এরপর আলোচনাসভা ও ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান শেষে প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে এ উৎসব সমাপ্ত হয়।
দুপুরে ‘স্বামী বিবেকানন্দের জীবন ও আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী জ্ঞানপ্রকাশানন্দ। সম্মানিত অতিথি ছিলেন যশোর সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস। আলোচক ছিলেন ডাক্তার জয় প্রকাশ বসু। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রবীণ শিক্ষক তারাপদ দাস ও যশোর স্বামী বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ যশোরের সভাপতি তপন রায়। স্বাগত বক্তব্য দেন আশ্রমের সহ সম্পাদক স্বামী আত্মবিভানন্দ। সঞ্চালনা করেন দেবাশীষ রাহা।
আলোচকরা আরও বলেন স্বামী বিবেকানন্দ সভ্যতার ইতিহাসে অনন্যসাধারণ এই কারণে যে, এক জীবনে ধর্ম-কর্ম এবং সমাজসেবার ব্রত গ্রহণ করে কেবল স্বদেশে নয়, পুরো বিশ্বে বহুজন নায়কে পরিণত হয়েছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ চর্চা না করে তাকে যদি কেবল একজন হিন্দু সন্ন্যাসী হিসেবে দেখা হয় তা হবে বেদনাদায়ক। ধর্ম-দর্শন-ভাষা-সাহিত্য-সমাজ সংস্কার ও মানবতার সেবা এবং বাঙালির নবজাগরণে স্বামী বিবেকানন্দের যে অবদান, তা যদি বাঙালি জাতি ভুলে যায়— তা হলে তা হবে আগামী দিনের সভ্যতার পথ রুদ্ধ করার শামিল। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বাস্তবতায় স্বামী বিবেকানন্দের কর্ম ও দর্শন থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় এই কারণে যে, স্বামী বিবেকানন্দের মতো একজন মহান কর্মবীরের ত্যাগ, দেশপ্রেম, সর্বজনীন ভালোবাসা এবং জীবনাদর্শ একটি সামাজিক বৈষম্য ও বঞ্চনামুক্ত ন্যায় এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে আমাদের উৎসাহিত করতে পারে।
আলোচনার পর অনন্য মেধাবী ৫০ শিক্ষার্থীর মাঝে স্বামী বিবেকানন্দ ও আমেনা খাতুন বৃত্তি প্রদান করা হয়।
এর আগে দুই দিনের উৎসবের অংশ হিসেবে যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের উদ্যোগে সোমবার সকালে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি সকল বিভাগের রোগীদের মাঝে ফল বিতরণ করা হয়। ফল বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক হিমাদ্রী শেখর সরকার ও যশোরের সিভিল সার্জন মাসুদ রানা। আরও উপস্থিত ছিলেন বাঁচতে শেখার নির্বাহী পরিচালক আঞ্জেলা গোমেজ, যশোর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মধুসূদন পাল, যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের সহ সম্পাদক স্বামী আত্মবিভানন্দ, সদস্য রবিরঞ্জন সাহা প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here