(নড়াইল জেলা) প্রতিনিধি : করোনাভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আমফানের দুর্যোগকালে নড়াইলে ১০০ শিশুর মুখে হাসি ফুটালো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মির্জা গালিব সতেজ। সুবিধাবঞ্চিত, ছিন্নমূল ও এতিম শিশুদের মাঝে ঈদের নতুন পোশাক দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া হাসপাতালের রোগি, এতিম, পথচারী এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে ইফতার ও ইফতারসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন সতেজ। নিজের জন্য ঈদের নতুন পোশাক না কিনে, সেই টাকাসহ পরিবারের সহযোগিতায় কিনেছেন সুবিধাবঞ্চিত ও এতিম শিশুদের ঈদের নতুন পোশাক। গত কয়েকদিন ধরে বাড়ি বাড়ি পৌছে দিয়েছেন সেই পোশাক। সতেজ ঢাকার ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার স্যায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিয়ারিং অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী এবং নড়াইল সরকারি মহিলা কলেজপাড়ার বিএম নজরুল ইসলামের ছেলে।
সতেজ জানান, মানবসেবা তার একমাত্র নেশা। তাই করোনাভাইরাসের ছুটিতে নড়াইলে এসে মানবসেবা করছেন। করোনার শুরু থেকেই অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া, মাস্ক বিতরণ, জীবানুনাশক স্প্রে, বিনামূল্যের সবজিবাজার, গরিব কৃষকের ধানকর্তন, সুবিধাবঞ্চিত মা ও শিশুদের মেডিকেল ক্যাম্প চালুসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করেছেন। এরই ধারাবাহিতায় রমজানের শুরু থেকে ইফতার ও ইফতারসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতালের রোগি, এতিম, পথচারী ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সুবিধাবঞ্চিত, ছিন্নমূল ও এতিম শিশুদের মাঝে দিয়েছেন ঈদের নতুন পোশাক। দিনে ও রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি পৌছে দিয়েছেন নতুন পোশাক। এই দুর্যোগে ঈদের পোশাক পেয়ে মহাখুশি নড়াইলের গোহাটখোলার ছোট্ট শিশু রাফি, আবদুর রহিম, আল মামুন, আলিমুন, মহিলা কলেজপাড়ার নিরব, পলি, বর্ষা, ফারজানাসহ অন্যরা।
এ ব্যাপারে সতেজের বন্ধু আহমেদ শাকিল, এস এম শাহ পরাণ, সামিরা হক শাম্মা, কে এম রাহাত নেওয়াজ, সোহাগ ফরাজি, মিনহাজ, পরাগ ও জাকারিয়া বলেন, করোনা মোকাবেলায় শুরু থেকেই মাঠে আছে সতেজ। তার নানা ধরণের কর্মকাণ্ড আমাদের অনুপ্রাণিত করে। পড়ালেখার পাশাপাশি মানবসেবা করে যাচ্ছে সতেজ। আমরা তাকে বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করে থাকি।
নারীনেত্রী ও সমাজসেবক পলি রহমান বলেন, সতেজের মানবসেবাকে স্যালুট জানাই। ছাত্রজীবনে সে যে কাজ করছে, তা অতুলনীয়। বিশেষ করে করোনার দুর্যোগময় সময়ে প্রায় ৫০০ অসহায় মানুষ বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়াসহ মাস্ক বিতরণ, জীবানুনাশক স্প্রে, বিনামূল্যের সবজিবাজার, গরিব কৃষকের ধানকর্তন, সুবিধাবঞ্চিত মা ও শিশুদের মেডিকেল ক্যাম্প চালু ছাড়াও বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করেছেন সতেজ।
অন্যদিকে ছেলের এ ধরণের মানবসেবায় খুশি সতেজের মা ও বাবা। তার বাবা বিএম নজরুল ইসলাম বলেন, পড়ালেখার জন্য সতেজকে যে টাকা দেয়া হয়, সেই টাকা থেকে জমিয়ে রেখে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে সে। কোনো নেশা বা বিপথে সতেজ টাকা ব্যয় না করে মানবকল্যাণে কাজ করছে, এটাই বড় গর্বের। এ কাজে আমরা তাকে অর্থ দিয়ে উৎসাহ যুগিয়ে থাকি।
মা শবনম বেগম বলেন, সতেজ পড়ালেখা ঠিক রেখে জনকল্যাণে যেসব কাজ করে যাচ্ছে, মা হিসেবে আমি অনেক খুশি। ইফতার আয়োজনে আমি রান্না করে দিয়েছি। এ ছাড়া খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ অন্য কাজেও তাকে সহযোগিতা করে আসছি। তার হাত দিয়ে লোকজন যদি একটু উপকৃত হয়, তাহলেই আমাদের সার্থকতা। ওর (সতেজ) জন্য দোয়া করি, সারাজীবন যেন নিঃস্বার্থ ভাবে মানুষের সেবা করতে পারে। সতেজের মতো সন্তান যেন আমাদের প্রতিটি ঘরে ঘরে জন্ম হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মির্জা গালিব সতেজ বলেন, ঈদের নতুন পোশাক কিনতে আমার এক আত্মীয় (ভাইয়ের শ্বশুর) পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। পাশাপাশি পরিবার থেকেও টাকা পেয়েছি। সব মিলে বাবা-মা, ভাই ও মামাদের সহযোগিতায় প্রায় ৩০ হাজার টাকায় সুবিধাবঞ্চিত ও এতিম শিশুদের জন্য ১০০ নতুন পোশাক কিনেছি। বাড়ি গিয়ে তাদের পোশাক পৌঁছে দিয়েছি। পড়ালেখার পাশাপাশি ২০১৭ সাল থেকে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করছি। বিশেষ করে করোনার দুর্যোগকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু থেকেই মাঠে নেমেছি। সুস্থ দেহে করোনা মোকাবেলা মানুষের পাশে আছি। ভবিষ্যতেও সবার পাশে থাকব ইনশাল্লাহ। সবাই দোয়া করবেন।
শিক্ষার্থী সতেজের এ ধরণের ইতিবাচক কর্মকান্ডের প্রশংসা করে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেন, তরুণ প্রজন্মের সেবক মির্জা গালিব সতেজের কর্মকাণ্ড খুব ভালো লেগেছে। এগুলো মানবিক উদ্যোগ। আমাদের এমপি মহোদয় মাশরাফি বিন মর্তুজার জেলা ‘মানবিক নড়াইল জেলা’ হিসেবে ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে নড়াইল দেশের পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে।