দশমিনার মানচিত্র থেকে দেড়শতাধিক খাল নিশ্চিহ্ন ১.শুস্ক মৌসুমে দেখা দেয় তীব্র পানি সংকট ২.বর্ষা হলে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা ৩.হাজার হাজার একর ফসলি জমি উর্বরতা হারাচ্ছে

0
452
SAMSUNG CAMERA PICTURES

নাসির আহমেদ,দশমিনা (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় দুই শতাধিক খালের মধ্যে দেড় শতাধিক খাল মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়া এই খালগুলো এখন কালের স¦াক্ষèী হয়ে আছে। খালগুলো না থাকায় শুস্ক মৌসুমে তীব্র পানি সংকট দেখা দেয়। উপজেলার হাজার হাজার একর ফসলি জমি উর্বরতা হারিয়ে ফেলেছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
উপজেলার তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রায় দুই শতাধিক খাল ছিল পানি নিস্কাশন এবং সেচ কাজের একমাত্র মাধ্যম। এই সব খাল দিয়ে সাগর কিংবা নদী থেকে পলি মাটি ভেসে এসে ফসলি জমিতে সরাসরি পড়তো। গ্রামের সঙ্গে গ্রামের ছিল সরাসরি নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই সকল খাল দিয়ে দক্ষিনাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বাউফল উপজেলার কালাইয়া বাজার এবং গলাচিপা উপজেলার উলানিয়া বাজারে নৌকা-ট্রলারে করে মালামাল আনা-নেয়া করা হতো। কিন্তু খালগুলো মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে এর চিহ্ন খুবই কম রয়েছে। নৌকা চলে না, পড়ে না ফসলি জমিতে পলি মাটি। ফলে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলছে। ফলে কৃষকরা পড়েছে বেকায়দায়। স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকরা জানায়,ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারী এবং ভূমি দস্যুরা নামে-বেনামে খালগুলো বন্দোবস্ত নিয়েছে। তারা খালগুলো ভরাট করে কিংবা বাঁধ দিয়ে মাছের চাষাবাদ করছে। এছাড়া অপরিকল্পিত বাঁধ ও কালভার্ট নির্মান করায় খালগুলো অকালেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষাকালে দেখা দেয় বিশাল জলাবদ্ধতা আর শুস্ক মৌসুমে সেচ কাজের জন্য তীব্র পানি সংকট দেখা দেয়। সরেজমিনে উপজেলার প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন খালে দেখা গেছে খালের উপর নির্মিত কালভার্টটি কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। খালটিতে কোন পানি প্রবাহ নেই। এই খালটি বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি কবুলিয়ত নিয়ে দখল করে রেখেছে। খালের দুই পাশ কেটে মাটি ভরাট করে চাষযোগ্য জমি তৈরি করা হয়েছে। এই খাল দিয়ে প্রায় দুই হাজার একর ফসলি জমির পানি উঠানামা করতো। বর্তমানে এই অঞ্চলে তেমন কোন ফসল উৎপাদন হয় না। উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চর হোসনাবাদ এলাকার খালটি বন্দোবস্ত দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এই খাল দিয়ে প্রায় ৫ হাজার একর জমির পানি উঠানামা করে। এছাড়া সদর ইউনিয়নের লক্ষèীপুর গ্রামের নিবারন কবিরাজের নামের বিশাল খালটি ১০/১৫ হাত পানি থাকা অবস্থায় ভূমি অফিস বন্দোবস্ত দিয়েছে। বন্দোবস্তকারী ব্যক্তিরা খালটি ভরাট করে চাষাবাদ করছে। সদরের দক্ষিন আরজবেগী গ্রামের আজগুরিয়া খালটি স্থানীয় প্রভাবশালীরা বন্দোবস্ত নিয়েছে। এই খালটিতে শুস্ক মৌসুমে পানি থাকলেও এটি বাঁধ দিয়ে মাছের চাষাবাদ করা হচ্ছে। ফলে এই খাল দিয়ে পানি উঠানামা করতে পারে না। উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের খলিশাখালীর কেয়ার খাল, ইঞ্জিনারায়ন খাল,শিংবাড়িয়া খাল, রণগোপালদী ইউনিয়নের কাটা খাল, আউলিয়াপুর গ্রামের নাপ্তার খাল,তালতলার হোতা খাল স্থানীয় প্রভাবশালীরা বন্দোবস্ত নিয়েছে। উল্লেখিত খালগুলো তারা ভরাট ও বাঁধ দিয়েছে। ফলে প্রতি বছর বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা ও শুস্ক কালে পানি শূন্যতায় হাজার হাজার ফসল নষ্ট হচ্ছে। খালে মাঝে অপরিকল্পিত কালভার্ট ও বাঁধ নির্মান করায় নদী থেকে কোন পলি মাটি আসতে পারে না। ফলে ফসলি জমি দিন দিন উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের পানি নিস্কাশনের খালগুলো কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here