নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইল কভিড হাসপাতালে যোগদানকারী ১১জন চিকিৎসকের আবাসন ব্যবস্থার সংকট॥
কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে(টিটিসি) তৈরি করা ৮০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে দু’মাসেও কোনো রোগি চিকিৎসা নেয়নি॥ করোনায় আক্রান্তদের খোঁজ-খবর না নেওয়া এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগ নড়াইল প্রতিনিধি নড়াইল কভিড-১৯ হাসপাতালে যোগদানকারী ১১জন চিকিৎসকের আবাসন ব্যবস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে(টিটিসি)
তৈরি করা ৮০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে দু’মাসেও কোনো রোগি চিকিৎসা নেয়নি। জেলায় করোনায় আক্রান্তদেও তেমন একটা খোঁজ-খবর না নেওয়া এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে খুব শিগ্রই টিটিসিতে প্রশিক্ষণ শুরু হবার আভাস পাওয়া গেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। জানা গেছে,নড়াইলে এ পর্যন্ত ৩১জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। সুস্থ্য হয়েছেন ১৯জন।বর্তমানে আক্রান্ত রয়েছেন ১০জন। এরা অধিকাংশই পারিবারিকভাবে আক্রান্ত।এছাড়া কালিয়ায় ২জন করোনায় মারা গিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসের শুরুতে করোনায় আক্রান্তদেরচিকিৎসার জন্য নড়াইল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসিতে) ৮০ শয্যাবিশিষ্ট কভিড-১৯ হাসপাতাল তৈরি করা হয়। করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য
১২মে নড়াইলে ১১জন চিকিৎসক যোগদান করেন। যোগদানের পর এসব চিকিৎসকদের সরকারি খরচে সদর হাসপাতাল সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে নড়াইল মডেল গেস্ট হাউসে২৯ তারিখ পর্যন্ত রাখা হয়। পরে সেখান থেকে চিকিৎসকদের টিটিসিতে কভিড-১৯হাসপাতাল আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। এখন এসব চিকিৎসকদের নিজস্বব্যবস্থাপনায় থাকতে বলা হচ্ছে। এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কভিডহাসপাতালের এক মহিলা চিকিৎসক নড়াইল মডেল গেষ্ট হাউসে ১৪ দিন অবস্থানকরলেও তাকে এবং তার স্বামীকে ঠিকমতো খাবার ও সার্বিক খোঁজখবর নেওয়াহয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ সময়ে সেই গেষ্ট হাউসের মালিক এবং একপ্রতিবেশী তাদের খাইয়েছে এবং খোঁজ-খবর রেখেছেন। তবে আক্রান্ত চিকিৎসক এব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামের করোনায় আক্রান্ত শাহীদুল ইসলাম চুন্নু এপ্রতিনিধিকে বলেন, সে ও তার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত । স্বাস্থ্য বিভাগেরপরামর্শে নিজেদের অর্থে ওষুধ কিনেছি। সরকারিভাবে কোনো ওষুধ দেওয়া হয়নি।
মাঝে স্ত্রী খুব স্বাসকষ্টে ভূগছিলেন। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এ পর্যন্তকোনো ফোন করেনি বা কেউ খোঁজ-খবর নেয়নি। এছাড়া ১৩দিন অতিবাহিত হলেও নতুন
করে করোনা টেষ্ট করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যোগদানকারী এক চিকিৎসক জানান, করোনা রোগিদের
চিকিৎসা দেওয়ার পর অবশ্যই একটি নিরাপদ এলাকায় অবস্থান করা দরকার।
চিকিৎসকরা নিরাপদ স্থান ছাড়া যদি অন্য কোথাও অবস্থান করেন তাহলেতো ওই
এলাকার মানুষ করোনা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। তারপর করোনাকালে তাদের কেউ
বাসা ভাড়া দিতে চাচ্ছেন না। সদর হাসপাতাল কোয়ার্টার অথবা কারিগরি
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আবাসিক কোয়ার্টারে চিকিৎসকদের আবাসনের ব্যবস্থা করলে
ভালো হয় বলে জানান।
নড়াইল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মোঃ শামিম হোসেন বলেন, উর্ধতন
কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে আমাকে জানিয়েছেন, আগামি ২০ জুনের মধ্যে বিদেশগামী
পুরুষ ও মহিলা এবং ড্রাইভিং-এর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এ
বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েছি।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) নড়াইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা.
অসাদুজ্জামান টনি বলেন, নড়াইলে করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য
বিভাগের কিছু সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত দরিদ্র রোগি
বাড়িতে নিরাপদ দূরত্বে থেকে সুচিকিৎসা নিতে পারছে কিনা বা তাদের সামর্থআছে কিনা! তারা বাড়িতে চিকিৎসা নিলে পরিবারের অন্যান্যরা ঝুঁকির মধ্যেপড়বে কিনা ! সেক্ষেত্রে তাদের হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা ! এসব
বিষয় কর্তৃপক্ষের দেখা দরকার।
করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে নড়াইলের সিভিল সার্জন এবং কভিড-১৯
প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ মোঃ আবদুল মোমেনকে এসব সমস্যার ব্যাপারে
প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কভিড-১৯ হাসপাতালের সামগ্রিক তত্ত্বাবধান
করছেন সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। আপনি তার তার সাথে কথা বলেন।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুস শাকুর বলেন, কারিগরি প্রশিক্ষণ
কেন্দ্রে কতদিন কভিড-১৯ হাসপাতালের কার্যক্রম চালানো যাবে সেটা একটি
চিন্তার বিষয়। কারণ কারিগরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তাদের খুব দ্রুত ক্লাস
শুরু হবে। তিনি করোনায় আক্রান্ত কোনো রোগির ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম-অবহেলা
হয়নি এবং হচ্ছেনা বলে জানান। নতুন যোগদানকারী চিকিৎসকরা ডিউটিকালীন সময়ে
তাদের আবাসন, খাওয়া ও যাতায়াত খরচ দেওয়া হবে। এজন্য একটি ফান্ডও রয়েছে।
এর বাইরে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় থাকতে হবে। তাদের আবাসনের জন্য
আপনারা আমরা সবাই মিলে চেষ্ট করব। করোনায় আক্রান্ত রোগিদের ব্যাপারে
বলেন, তাদের ঘন ঘন চা খাওয়া, কুশুম গরম পানির ব্যবহারসহ বিভিন্ন নার্সিং
সেবাটা বাড়িতেই ভালো হয়। এ কারণে নড়াইলে আক্রান্তরা অধিকাংশই বাড়িতে
চিকিৎসা নিচ্ছেন। নড়াইল কভিড হাসপাতালে যোগদানকারী ১১জন চিকিৎসকের আবাসন ব্যবস্থার সংকট॥