হোটেল সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্রদান, রেশনিং ব্যবস্থা চালু, কাজ, খাদ্য ও সুচিকিৎসা দাবিতে সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান

0
223

আজ ২২ জুন ২০২০ খ্রিঃ সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায় মহামারি করোনা ভাইরাসের বিপর্যয় থেকে হোটেল শ্রমিক ও শিল্প বাঁচাতে বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। হোটেল সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্রদান, রেশনিং ব্যবস্থা চালু, কাজ, খাদ্য ও সুচিকিৎসার নিশ্চয়তার দাবিতে সারাদেশব্যাপী সমাবেশের অংশ হিসেবে যশোর প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও যশোর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ১১ টায় যশোর প্রেসক্লাবের সামনে মুজিবর রহমান মহারাজের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণা সরকার, সহ-সম্পাদক এ্যাডঃ আহাদ আলী লস্কর, দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান রাজেস, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক তাইজুল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক আইয়ুব হোসেন ও প্রচার সম্পাদক আতিকুর রহমান জিহাদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের অন্যান্য শ্রমিক সেক্টরের মতো হোটেল সেক্টরে শ্রমিকরাও বিপর্যস্ত। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করায় বিশ্ব অর্থনীতি মহামন্দার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও বুভুক্ষাবস্থা সৃষ্টিসহ দুর্ভিক্ষ অবস্থা সৃষ্টির উপক্রম তৈরি হচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সরবরাহ চেইনের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো গভীরভাবে সম্পৃক্ত। ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা ও দুর্ভিক্ষ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমাদের দেশে এখনই বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। হোটেল শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ খাতে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মরত এবং তাদের উপর নির্ভরশীল রয়েছে তাদের পরিবারসমূহ। ফলে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এ খাতের উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ। অথচ এ খাতের মালিকদের শুধু মুনাফা কেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনা এবং শ্রমিকদের দায়িত্ব গ্রহণ না করার মানসিকতার কারণে এ সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের জীবন-যাপন আজ অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই দেশের হোটেল রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়ে এ খাতের কর্মরত শ্রমিকরা। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হোটেল মালিকরা শ্রমিকদের মজুরিসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান বন্ধ করে দেয়। এমনকি বিগত ঈদুল ফিতরের উৎসব বোনাসও প্রদান করেনি মালিকরা। করোনা দুর্যোগের বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মালিকরা শ্রমিকদের ছুটি প্রদান করেছেন। ফলে আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের সকলেরই স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক মজুরিসহ অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্য। কিন্তু মালিকরা তা প্রদান না করায় হোটেল সেক্টরের শ্রমিকরা খেয়ে না খেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে এক মানবেতর জীবন যাপন করছে। অপরদিকে দেশের কর্মহীন হয়ে পড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য সরকার ত্রাণ, রেশন ও প্রণোদনা কর্মসূচি সরকার কর্তৃক ঘোষণা করা হয়। এ প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও অঞ্চলভিত্তিক তালিকা করে হোটেল শ্রমিকরা সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে প্রদান করে। সে অনুযায়ী কোথাও কোথাও নামকাওয়াস্তে দুই একবার সরকার প্রদত্ত ত্রাণ পেলেও মূলত অধিকাংশ হোটেল শ্রমিকরা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ত্রাণ ও প্রণোদনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকেছে। দেশে সাধারণ ছুটি শিথিল হওয়ার পর এবং এলাকাভিত্তিক লকডাউন কার্যকরি থাকায় আংশিক হোটেল রেস্টুরেন্ট নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চালু করা হয়েছে। তাতেও কর্মরত শ্রমিকদের আংশিক মজুরি প্রদান করা হয়। মূলত স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠান চালু করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা থাকার কারণে ইতিমধ্যে কর্মরত শ্রমিকদের অনেকেই করোনা আক্রান্ত এবং করোনা উপসর্গ বহন করছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্তৃক তাদের চিকিৎসাসহ, ঝুঁকিভাতা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করছে না। ফলে সারা দেশের হোটেল শ্রমিকদের একটা বৃহৎ অংশ এখনো কর্মহীন থেকে এবং করোনা আক্রান্ত ও আতংকে থেকে দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত হয়ে এক মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বক্তারা আরো বলেন, এমতাবস্থায় হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের জন্য জরুরিভাবে সরকারি উদ্যোগে চিকিৎসা নিশ্চয়তা সহ নিয়মিত ত্রাণ, প্রণোদনা ও রেশনিং-এর ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যিক প্রয়োজন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা আক্রান্ত এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা যাতে দূর্ভোগে না পড়ে সেজন্য সরকারের উদ্যোগে প্রত্যেকে শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে তাদের মজুরির বিপরীতে সমপরিমাণ অর্থ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের শ্রমিক-কর্মচারীদের করোনা ভাইরাস মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত হোটেল শ্রমিকদের বেতন সরকারিভাবে ১০০% পরিশোধ করার জোর দাবি জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here