বিশেষ প্রতিনিধি : ভাতুড়িয়ার ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী নুরু ওরফে কিলার নুরু নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। তার বাহিনীর ক্যাডারদের ব্যবহার করে সে সরকারী খাল বিল দখল, অসহায়দের সম্পত্তি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসা, স্বর্ণের চোরাচালানীসহ নানামুখি অপকর্মের মাধমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছে। মাছের ঘের, মার্কেট, ফিস ফিডের ব্যবসা, প্রিন্টিং প্রেস থেকে শুরু করে নানামুখি ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের মাধ্যমে বর্তমানে সে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার এই অবৈধ সম্পদের পেছনে কত অসহায় মানুষের আর্তনাদ, স্বজনহারাদের বুক ফাঁটা বেদনা সে সবই কি চাপা পড়ে যাবে। বিচার পাবেনা স্বজনহারা মানুষ গুলো। সহায় সম্বলহীন মানুষ গুলো কি ফিরে পাবে না তাদের জায়গা জমি- এসব প্রশ্ন এখন সংশ্লিষ্টদের। এই নুরু বাহিনীর ক্যাডারদের হাতেই গত এক দশকে কমপক্ষে ৭ জন প্রাণ হারিয়েছে। নানা ছলচাতুরি করে এসব ক্যাডাররা এলাকার বহু নিরীহ মানুষের জায়গা জমি বসতবাড়ি দখল করে তাদেরকে সর্বশান্ত করেছে। কিন্তু অদ্যাবধি এসব ক্যাডার ও তাদের গডফাদারের কোন বিচার না হওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে ঘরে ঘরে। ভয়ঙ্কর এই জনপদ নুরু বাহিনীর ক্যাডারদের পদভারে দিন দিন আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।
যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের শহরতলীর ভাতুড়িয়া- সাড়াপোল, নারায়নপুর, দড়িপাড়া, ঘুটো, বর্মনপাড়াকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নুরু বাহিনীর বিশাল ক্যাডার বাহিনী। এই ক্যাডারদের পদভারে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে খাল,বিল, নদী আর মৎস্যঘেরে ঠাঁসা এই জনপদটি। বিগত দিনে হাসান বাহিনীল নিয়ন্ত্রিত এই জনপদে কত মানুষের প্রাণ গেছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সেনা শাসিত সরকারের আমলে বাহিনী প্রধান হাসান ও তার ভাই মিজান র্যাবের ক্রস ফায়ারে নিহত হয়। পরবর্তীতে ভারতে পালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি এই বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ভাতুড়িয়ার ডন লিটুর। এই পরিস্থিততে হাসান বাহিনীর বিপুল পরিমান অস্ত্র আর লুটপাচ ও চাঁদাবাজির বিপুল অংকের টাকা ও সহায় সম্পত্তির কাগজপত্র নিয়ে আতœগোপনে চলে যায় হাসান বাহিনীর ক্যাশিয়ার খ্যাত খুনি নুরু ওরফে নুর ইসলাম। এছাড়া হাসান বাহিনীর কিলিং মিশনের সদস্য ভাতুড়িয়ার মান্নান ওরফে কসাই মান্নান, মিন্টু, কবিরুজ্জামান কাজল,জাকির, গফ্ফার,আতি খোকা,ইউনুচ প্রমুখ আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে গেলে নুরু প্রকাশ্যে আসে এবং পরিস্থিতি বুঝে সরকারী দলের ডাক সাইডের একনেতার বড়ে খ্যাত এক ব্যক্তির আ¤্রয় প্রশ্রয়ে শরু করে নতুন মিশন। আর এই মিশনের প্রধান লক্ষ্য ছিল হাসান বাহিনীর অস্ত্র আর ক্যাডারদের কাজে লাগিয়ে নিজের ভবিষ্যত তৈরী করে। সে কাজে নুরু মহুরী শতভাগ সফল। আর এই সফলতা অর্জন করতে এহেন কোন কাজ নেই যা সে ও তার বাহিনীর ক্যাডাররা করছে না। আর তার এই চলার পথে যারা বাঁধা হয়েছে তাদেরকে তিনি সরিয়ে দিয়েছেন নানা কৌশলে। কখনো ক্যাডার দিয়ে কখনো নিজে এসব প্রতিবাদী কন্ঠ স্তব্ধ করেছেন। আর এভাবে গত ১০ বছরে শুন্য থেকে কোটিপতি বনে গেছেন নুরু মহুরী। এক সময় যার নুন আনতে পানতা ফুরাতো সেই নুরু এখন চাঁচড়া ভাতুড়িয়া এলাকায় ৩টি দালান বাড়ির মালিক। রয়েছে একাধিক মৎস্য ঘের। প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসা, ফিডের ব্যবসা,বানিজ্যিক মার্কেট ও প্রাইভেট কার। দুইজন আর্মসধারী ক্যাডার নিয়ে লড স্টাইলে নুরুর চলাচল গোটা এলাকার মানুষের আতঙ্কের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে একের পর এক মানুষ খুন ও থানায় মামলা । তারপরও নুরু ও তার ক্যাডার বাহিনী থাকছে পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যা সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। নুরু মহুরীর খুটির জোর দেখে সবাই হতবাক।
এক অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, গত এক দশকের বেশি সময়ে হাসান ও নুরুর বাহিনীর ক্যাডারদের হাতে লাউজানির ফোর মার্ডার, সাড়াপোলের সিরাজ, মাহিদিয়ার রেজাউল ও অসিকার, চাঁচড়ার জোড়া হত্যাকান্ড, ভাতুড়িয়ার আলতাফ হত্যাকান্ড, মাহিদিয়ার কাংগাল জলিল,সুতিঘাটার লাবলু, পিডিবির গাড়ি চালক মতিয়ার, দাড়িপাড়া গ্রামের মহর আলী , চাঁচাড়ার রাষ্ট্রীয় পদক প্রাপ্ত মৎস্য ব্যবসায়ী ও সম্পাদক কামাল , ভাতুড়িয়ার কৃষক হাশেম আলী হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া নুরুর বহু ক্যাডার বিগত দিনে হাসান বাহিনীর ক্যাডার হিসেবে চানপাড়ার রশীদ ও বাচ্চু, দৈনিক জনকন্ঠের সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল ও দৈনিক রানার সম্পাদক আর এম সাইফুল আলম মুকুল হত্যাকান্ড, যশোরের আলোচিত উদীচী হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত ছিল। যাদের মধ্যে মিন্টু, মান্নান, জাহাঙ্গীর,সেলিম, মফিজ মেম্বর ও রওশনের নাম উঠে আসে সর্বাঙ্গে।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বাহিনী প্রধান নুর ইসলাম ওরফে নুরু সাম্প্রতিক সংঘটিত ২টি মামলায় এজাহার নামীয় আসামী হিসেবে সে পুলিশের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রহস্যজনক কারনে পুলিশ এই মোস্ট ওয়ান্ডেট ক্রিমিনালকে আটকে গড়িমসি করছে। সুত্র বলছে প্রায়ই নুরু স্বশস্ত্র অবস্থায় শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করলেও পুলিশের চোখে সে পলাতক। তার অন্যতম ক্যাডার কালা মিন্টু ও কসাই মান্নান প্রত্যেকেই ৬টি হত্যা মামলাসহ প্রায় একডজন মামলার ফেরারী আসামী। নুরু বাহিনীর ক্যাশিয়ার খ্যাত জাহাঙ্গীর অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের কারবারী। সে নুরু বাহিনীর অস্ত্র ভান্ডারের রক্ষক। এছাড়া বর্তমানে অবৈধ ভাবে দখল করে গড়ে তোলা শত শত বিঘার মাছের ঘের ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে নুরু কোটিপতি বনে যাওয়ায় সে সবাইকে বিশেষ রফায় ম্যানেজ করে চলে। ফলে তার এই সামাজ্যে কেউ আঘাত আনতে পারছে না বলে দাবি ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর। এদিকে শুধু সদর নয় এর বাইরেও শার্শা ও বাঘারপাড়ায় অন্যের জমি দখল করে নুরু গড়ে তুলেছে একাধিক মাছের ঘের।