সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে সোর্সরূপী চোরাচালানী এবাদুল গ্যাং বেপরোয়া লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্তের সেই চোরাকারবারী এবাদুল (গ্যাং লিডার)

0
235

ভোমরা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি ঃ মাদক, হুন্ডি, স্বর্ণ, মানব ও বিদেশী অতিথি পাখি সম্পদ পাচারের নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সাতক্ষীরার ভোমরা ও লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্ত। অপ্রতিরোধ্যভাবে গজিয়ে উঠা আন্তর্জাতিক চোরাকারবার সিন্ডিকেটের শীর্ষ চোরাকারবারী এবাদুল গ্যাং দীর্ঘদিন চোরাচালান কর্মকান্ডে সর্বোচ্চ এগিয়ে। করোনার মহাদূর্যোগকালে থেমে নেই এই চোরাকারবার সিন্ডিকেটের কোটি কোটি টাকার অবৈধ চোরাচালান কার্যক্রম। বাংলাদেশ থেকে বিদেশী অতিথি পাখি, স্বর্ণ ও হুন্ডির টাকা ভারতে পাচার করছে এবং ভারত থেকে বিশাল আকারের মাদকের চালান ও ভারতীয় মহামূল্যবান পোষ্য পাখি বাংলাদেশে পাচার করে নিয়ে আসছে। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে সীমান্তের প্রত্যক্ষদর্শীদের নিকট থেকে। চোরাচালান সিন্ডিকেটের এবাদুল গ্যাং এর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগের মধ্যে রয়েছে মানব, মাদক, হুন্ডি, স্বর্ণ, দেশীয় মৎস্য সম্পদ, মহা মূল্যবান দেশী ও বিদেশী অতিথি পাখি পাচার এবং বিজিবির চোর্স পরিচয় দিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ড। এদিকে সোমবার (২৯ জুন ২০২০) সকালে বিজিবির স্পেশাল ফোর্স লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতে পাচার কালে ৫ ব্যাগ পোষ্য পাখি আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে এবাদুল গ্যাং পাখি ধরার ঘটনা জানতে পারলে তারা তড়িঘড়ি করে ভোমরা বিজিবি ক্যাম্পের পিছনে চলে যায় মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে এবাদুল, মৃত ছাকা গাজীর ছেলে মিজান, ভাড়–খালী গ্রামের মৃত রইচউদ্দীন মুহুরির ছেলে টুটুল ও মৃত ছোবহানের ছেলে রশিদসহ এবাদুল গ্যাং এর লোকজন। এখানে দীর্ঘক্ষন বিজিবি সদস্যদের সংগে আটককৃত পাখি ছাড়িয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে দেনদরবার হলেও বিজিবি গোয়েন্দা সংস্থার চাপের মুখে তা সম্ভব হয়নি বলে একাধিক সূত্র জানায়। এদিকে বিজিবি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য (এফএস) ফখরুলের নিকট মুটোফোনে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, তিনি লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্ত থেকে ৫ ব্যাগ পাখি আটকের সত্যতা স্বীকার করেন। তবে পাখি পাচারকারীদের নাম ও আটককৃত পাখির মূল্য জানতে চাইলে, তিনি বলেন আকটকৃত পাখি সাতক্ষীরা বিজিবি ব্যাটালিয়নে পাঠানো হয়েছে। সীমান্তের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রকাশ হয়ে আসে দেশী ও বিদেশী পোষ্য পাখি পাচারের মূল ঘটনা। এদিকে প্রথমে বিদেশ থেকে বিমান যোগে এসব পাখি চলে আসে ঢাকায়। ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার আলিপুর, বহেরা, কুলিয়া ও পারুলিয়ার এসে পৌছায় এসব পাখি। এখান থেকে পারুলিয়ার আলম ও কুলিয়ার ফারুকসহ একাধিক চোরাচালানী মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাখি গুলো পৌছে দেয় ভোমরা সীমান্তের শীর্ষ চোরাকারবারী এবাদুল গ্যাং এর কাছে। এরপর সুযোগ ও নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহার করে ভোমরা-সাতক্ষীরা সড়ক, শ্রীরামপুর-ভোমরা সড়ক, কুলিয়া-শাঁখরা সড়ক এবং শাঁখরা ও ভোমরা সড়ক। পাখি পাচারের সুবিধার্থে তারা বিভিন্ন সময় যাতায়াত রুট পরিবর্তন করে। ব্যাগ ভর্তি পাখি গুলো মটর সাইকেল যোগে নিয়ে আসে ভোমরা ও লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্তের গোপন আস্তানায়। পরে সীমান্তে টহলরত বিজিবি সদস্যদের নাকের ডগা দিয়ে নির্বিঘেœ ভারতের ঘোজাডাঙ্গা সীমান্তের ইয়াকুব গাজীর ছেলে ইমরান, ঝন্টু ও মন্টু এবং ঘোজাডাঙ্গা গ্রামের ভন্দার ছেলে সাব্বিরের নিকট পৌছে দেয় এবাদুল গ্যাং। এরপর সুবিধামত ঘোজাডাঙ্গা থেকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া পাখিগুলো ভারতের রাজধানী দিল্লিসহ বিভিন্ন প্রদেশে পৌছে দেয় ভারতীয় চোরাকারবারীরা। একই ভাবে ভোমরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসছে ভারতীয় বিভিন্ন প্রজাতির পোষ্য পাখি। ভারত থেকে পাচার হওয়া পাখিগুলো একই নিয়মে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌছে দেয় এবাদুল গ্যাং। ভারত ও বাংলাদেশে পাচার হওয়া পাখির মধ্যে অন্যতম কাকাতোয়া যাহার প্রতিটি পাখির মূল্য- ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, মনকান্ডে নামক প্রতিটি পাখির মূল্য ২ লক্ষ টাকা, ককাটেল নামক প্রতিটি পাখির মূল্য ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং বাজিগর নামক প্রতিটি পাখির মূল ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। এছাড়া পোষ্য পাখির মধ্যে ল্যাবট, ময়না ও টিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ দিকে (২৯ জুন সোমবার) এবাদুল গ্যাং কর্তৃক আটককৃত ৫ ব্যাগ পাখি ভোমরা ক্যাম্পের পিছন থেকে দেনদরবারের মাধ্যমে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টার বিষয়টি ভোমরা বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার (সুবেদার) হারুন অর রশিদের নিকট জানতে চাইলে তিনি কিছুই অবগত নন বলে জানান। তবে পাচারের পাখিগুলো আটকের সত্যতা স্বীকার করেন এবং পাখি গুলো সাতক্ষীরা বিজিবি ব্যাটালিয়নে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here