ভুমি দস্যু হাফিজুর রহমান বটু গংদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের সাতকাহন-১ বকচর হুশতলা এলাকার শেখ ওমর আলীর পরিবার ভিটেমাটিসহ সহায় সম্বল হারিয়ে আজ নিঃস্ব

0
403

জি এম অভি : যশোর শহরের বকচর হুশতলা এলাকার একদল চিহ্নিত ভুমিদস্যুর কালো থাবায় তছনছ হয়ে গেছে শেখ ওমর আলীর পরিবার। ভুমিদস্যুদের জালজালিয়াতিতে পৈত্রিক সম্পত্তি ও ভিটেমাটি হারিয়ে পরিবারটি এখন রাস্তার ফকির। বেদখল হয়ে যাওয়া কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধারে ওমর আলী ও তার সন্তানরা এখন আইন আদালতের দ্বারস্থ। ন্যায় বিচার প্রাপ্তির আশায় তারা ঘুরছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। কিন্তু ভুমিদস্যু মহলটি প্রভাবশালী ও অর্থবিত্তের মালিক হওয়ায় সর্বহারা শেখ ওমর আলীর বিচারের বাণী নিরবে নির্ভৃতে কেঁদে ফিরলেও তা কারোর হৃদয়ে আঘাত করতে পারছে না। উপরন্তু ভুমিদস্যুরা ভিটেমাটি ছাড়া করার পরও শেখ ওমর আলী ও তার সন্তানদের পৃথিবী ছাড়া করার চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এদিকে বেদখলকৃত পৈত্রিক সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ত্ব ফিরে পেতে যশোরের বিজ্ঞ জেলা জজ ১ম আদালতে ওমর আলীর দাখিলকৃত দেওয়ানী মামলা চলমান থাকা অবস্থায় আদালতকে বৃদ্দাঙ্গুলি দেখিয়ে ভুমিদস্যু হাফিজুর রহমান ওরফে বটু, আবুল কাশেম, আলামিনগংরা ভুয়া কাগজপত্রের বুনিয়াদে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ওই সম্পত্তি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা রোজগার করছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় বটু ও তার ক্যাডাররা বৃদ্ধ ওমর আলী ও তার সন্তানদের হত্যার হুমকি দিয়ে ভিটেমাটি ছাড়া করছে। স্থানীয়রা বলছে হাফিজুর রহমান বটু ও তার ক্যাডার বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যেদের ভয়ে এলঅকার কোন লোক মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। এরা অবৈধ পন্থায় উপার্জিত টাকার গরমে বটুগং এলাকাবাসীকে মানুষ মনে করছে না। তারা বকচর, হুশতলা, নাজিরশংকরপুর, বাসটার্মিনালসহ গোটা এলাকায় ভুমির অবৈধ কারবারি হিসেবেই পরিচিত। এদের কাজই হচ্ছে নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে সমাজের অসহায় নারী পুরুষের সম্পত্তি নামে বেনামে দখল করে তা বেঁচাবিক্রির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, যশোর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বকচর এলাকার আদি বাসিন্দা মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে শেখ ওমর আলী। পিতার মৃত্যুর পর শেখ ওমর আলী বৈধ ওয়ারিশ হিসেবে বকচর, শংকরপুর ও বেজপাড়া মৌজায় বিভিন্ন দাগ খতিয়ানে ২ একর ৬৬ শতক জমির মালিক। ১৯২৭ সাল ও ১৯৬২ সালের রেকর্ড মুলে শেখ ওমর আলী ও তার সন্তানরা দীর্ঘদিন উক্ত জমির বিভিন্ন অংশ ভোগ দখল করে আসছিল। কিন্তু আশির দশকে ওই জমির ওপর কুনজর পড়ে স্থানীয় ভুমিদস্যু খ্যাত মৃত আবুল হোসেন শেখের ছেলে আমির হোসেন মনু ও কাঞ্চন সরদারের ছেলে হাফিজুর রহমান ওরফে বটু গংদের। এক পর্যায়ে তাদের সাথে হাত মেলায় আমির হোসেন মনুর ছেলে আবুল কাশেম, নুর মোহাম্মদ খানের ছেলে আলামিনসহ অন্যরা। এই চক্রটি নিরক্ষর শেখ ওমর আলীর দুর্বলতা ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে জালজালিয়াতির মাধ্যমে উক্ত ২একর ৬৬ শতক জমির মালিকানা স্বত্ত্ব জোর করে দখর করে নেয়। আশির দশক থেকে বিভিন্ন সময় এক শ্রেণীর কুমতলববাজদের সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন জনকে দাতা সাজিয়ে ওই জমি বিভিন্ন দাগে বিভক্ত করে খন্ড খন্ড আকারে ভোগ দখল করত: তা বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। স্থানীয়রা বলছে শেখ ওমর আলীর পিতা মরহুম আব্দুল জব্বার শেখ ও তার পরিবারের সদস্যরা ছিল এই বকচর এলাকার ছোট খাট জমিদার। মৃত্যুর সময় জব্বার শেখের ওয়ারিশ হিসেবে শেখ ওমর আলী ভিটেমাটিসহ প্রায় ২ একর ৬৬ শতক জমি প্রাপ্ত হয়ে ভোগ দখল করতে থাকে। যার মধ্যে ৮২ নম্বর শংকরপুর মৌজায় ৫১১, ৭০৯,১০২, ৬৫০,৭১৭ নং এস এ খতিয়ানের ১০৫২,১০৬৫,১০৬৬,১০৬৮,১০৬৯ নম্বর দাগের ২ দশমিক ৮৪ একর, ৮৮ বকচর মৌজার ২৩,৮১,৯২,৯৪,১২৮,২০৮,২৪৩ ও ২৫৬ নং এস খতিয়ানের এস এ দাগ নম্বর ১৯,৫৪,৫৫,৫৬,৬০,৬১,৬৫,৬৮,৬৯,ও ৭৫ দাগের ৫ দশমিক ৪৩ একর এবং ৮১ নং বেজপাড়া মৌজার ৪১৮ নং এস এ খতিয়ানের ৪৬০ নং এস এ দাগের ৪১ শতক জমির মধ্যে সর্ব মোট ২ দশমিক ৬৬ একর জমির মালিক শেখ ওমর আলী। কিন্তু আকষ্মিক ভাবে ১৯৮৫ সালে নাজির শংকরপুরের মৃত ইশারত আলীর ছেলে হাফিজুর রহমান বকচর নিবাসী কাঞ্চন সরদারের ছেলে হাফিজুর রহমানের নামে একটি পাওয়ার অব এ্যাটর্নী দলির সম্পাদনা করে দেয়। যার দলিল নম্বর ৪০৪৭। উক্ত দলিলে ইশারত আলীর ছেলে হাফিজুর ৮৮ নং বকচর মৌজার ২৫৬ নং এস এ খতিয়ান ও ১২২১ হাল কতিয়ান এবং ৬৪৯, ৭৯৭ ডিপি,৯৪৩, ১৩০৯ সেপারেশন খতিয়ান বুনিয়াদে এস এ দাগ নং ১৯,৬১,৬০,৫৪,৫৫,৫৬ আর এস দাগ নং ১৫১৫,১৫১৩ । এই সকল দাগের মোট জমির মধ্যে ১৪ শতক জমি যা কাঞ্চন সরদারের ছেলে হাফিজুর রহমান পাওয়ার অব এ্যাটর্নী দলিল মুলে মালিক বনে যায়। দলিলের বিবরণে বলা হয়, ৮৮ নং বকচর মৌজায় এস এ ২৫৬ নং খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক জব্বার শেখ স্বত্বদখল থাকা অবস্থায় ১৯৮৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ২১৩১ নং কবলায় ও বিগত ১৯৮৭ সালের ২৫ মার্চ তারিখে সম্পাদিত ৫২৩৪ নং কবলায় হাফিজুর রহমান উক্ত জমির স্বত্ববান হয়। পরে বর্তমান হাল মাঠ জরিপ রেকর্ডে বুজারত ১২২১ নং খতিয়ানে হাফিজুর রহমান নিজ নামে সম্পূর্ণ জিিমট রেকর্ড করিয়ে নেয়। সুচতুর হাফিজুর এই ভুয়া কবলা মুলে জমিটি শুধু তার নামে হাল রেকর্ড সম্পন্ন করেই বসে থাকেনি। সে ৬০২/৯-১/১৯৯২-৯৩ নং কেসে নিজ নামে নামপত্তন সম্পন্ন করে। পরে হাফিজুর রহমান ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি ১০৫০ নং কবলায় জনৈক জোবায়দা সুলতানা তনয়া খরিদ করে । তিনিও রাজস্ব ভুমি অফিসে ৯৫৫/৯-২/২০০৫-০৬ নং কেসে নিজ নামে নামপত্তন করত: ভোগ দখল করতে থাকে। কিন্তু সময়ের আবর্তে উক্ত জমি রক্ষানাবেক্ষনার্থে কাঞ্চন সরদারের ছেলে হফিজুর রহমান বটুর নামে পাওয়ার অব এ্যাটর্নী সম্পন্ন করা হয়।
এই ভাবে নিরক্ষর শেখ ওমর আলীকে নানা ভাবে ভয়ভীতি ও ছলচাতুড়ি করে উক্ত হাফিজুর গং বিভিন্ন খাত উপখাতে নামে বেনামে লাখ লাখ টাকার সম্পত্তি জবর দখল শুরু করে। শুধু তাই নয় উক্ত জবরদখলীয় সম্পত্তি হাফিজুর রহমান বটু সরদার, ইমদাদুল হক ইমাদুল, মেজো, আলামিন, আবুল কাশেম গংরা জোর পূর্বক ছোট ছোট প্লট আকারে উক্ত জমাজমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে হাল রেকর্ড বুনিয়াদে বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় বটু গংরা শেখ ওমর আলী ও তার সন্তানদের হত্যার ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। এমতাবস্থায় ওমর আলী বাদী হয়ে ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর যশোরের বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা রুজু করেন। যার নম্বর-১২৭/১১. মামলায় ২৮ জনকে বিবাদী করা হয়। বিবাদীগণ হচ্ছে- যশোর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের বকচর হুশতলা এলাকার মৃত আবুল হোসেন শেখের ছেলে আমির হোসেন মনু ও মেয়ে মোছাঃ সখিনা খাতুন,মৃত রাঙ্গুর শেখের ছেলে মহিদুল ইসলাম,আব্দুল মান্নানের স্ত্রী নুর জাহান বিবি,সলেমান শেখের ছেল মজনু শেখ,হাবিবুর রহমানের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন, মৃত নঈম খানের ছেলে বিল্লাল হোসেন, সুরোত আলীর ছেলে মোজাহার আলী, মোজাহার আলীর স্ত্রী রহিমা খাতুন, ছলেমান শেখের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন, ইমাদুল শেখের স্ত্রী সীমা পারভীন মোবারক আলীর ছেলে সাহেব আলী, হারুনর রশীদের ছেলে আবুল বাশার, আবুল বাশারের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম, ইসাহাকের ছেলে মনিরুল ইসলাম ও মেয়ে জলি, ইসাহাকের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন,নুরুল হুদার স্ত্রী মেহেরুন নেছা, ওয়াজেদ আলীর ছেলে সেলিম উ্দদীন, নুর হোসেনের স্ত্রী সালেহা খাতুন, মল্লিক চানের স্ত্রী খালেদা বেগম, জমির ফকিরের ছেলে চান মিয়া ফকির ও দুলু ফকির, বাবলুর স্ত্রী ডলি বেগম, কাশেম আলীর ছেলে রুস্তম আলী, এমাদ উদ্দিনের ছেলে শাজাহান আলী, ইশারত আলীর ছেলে হাফিজুর রহমান ও নুরুল হুদার ছেলে হারুনর রশীদ। মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেছেন এই বিবাদীগণ পরস্পরের যোগসাজসে তার পৈত্রিক সম্পত্তি অবৈধ পন্থায় ভিন্ন ভিন্ন কাগজপত্র তৈরী করে জোরপূর্বক দখল করে একে অপরের কাছে ক্রয় বিক্রিয় করে তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। সিএস ও এস এ রেকর্ড মুলে তিনি বৈধ ওয়ারিশ সূত্রে ৩ মৌজায় একাধিক খতিয়ানে ও একাধিক দাগে উক্ত ২ একর ৬৬ শতক জমির মালিক। কিন্তু আজ এই ভুমি দস্যু হাফিজুর রহমান বটু, আবুল কাশেম, আলামিন গংদের ষড়যন্ত্র আর চক্রান্তে তিনি পথের ভিখারী। এই চক্র ভুয়া জাল দলিল পত্র তৈরী করে তার সমুদয় সম্পত্তি হাল রেকর্ড বুজিরাত তাদের নিজ নিজ নামে করত: তা ভোগ দখল ও বেচাবিক্রি করছে। প্রতিবাদ করলে তাবা বাদী ও তার সন্তানদের হত্যার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। ফলে তিনি তার দখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তির মালিকানা ফিরিয়ে দিতে বৃদ্ধ শেখ ওমর আলী বিজ্ঞ আদালতের দারস্থ হয়েছেন। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। তার মধ্যেও ওই ভুমি দস্যু চক্র নিজেদের মতো করে উক্ত জমাজমি ক্রয় বিক্রয় অব্যাহত রেখেছে। এদিকে নিজের শারিরকি অক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সামর্থ না থাকায়শেখ ওমর আলী সিএস ও এস এ রেকর্ড মুলে তার সমুদয় সম্পত্তি ২একর ৬৪ শতক জমি তার ছেলে হয়রত আলী বাবুর নামে গত ২০১৭ সালের ৯ আগষ্ট পাওয়ার অব এ্যাটর্নি দলিল করে দেন। যার নম্বর-১০৬৭১/১৭ । কিন্তু ওই হেবা দলিল মুলেও হযরত আলী বাবু তার পৈত্রিক সম্পত্তিতে ভোগ দখল প্রতিষ্ঠা করতে পারছেন না। কারন ওই ভুমি দস্যুরা তাকেসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি ও নানা প্রকারের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। – চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here