লোহাগড়ায় রোগীদের মনোবল বৃদ্ধি করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা

0
581

লক্ষীপাশা(নড়াইল)প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়ার স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা যোদ্ধারা জীবণের ঝুঁকি নিয়ে সেবার মানসে কাজ করছেন। সূত্র জানায়, লোহাগড়া সরকারি হাসপাতালে অন্তত ২০ জন যোদ্ধা করোনা বিষয়ে কাজ করছেন। সরকারি হাসপাতালের স্ট্যাফ ছাড়াও করোনা সেবায় কাজ করছেন স্থানীয় যুবকও। রোগীদের উৎসহ-উদ্দিপনা, মনোবল বৃদ্ধি করছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোহাগড়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের যোদ্ধাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শরীফ শাহাবুর রহমান, আবাশিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডাঃ আবুল হাসনাত, ডাঃ মোঃ কামরুল ইসলাম, ডাঃ রিপন কুমার ঘোষ, ডাঃ সুমনা খানম, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট(ইপিআই) প্রশান্ত কুমার ঘোষ, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) সুষমা বালা মল্লিক, লুনা খাতুন (সিএইচসিপি), লাইলাতুন খাতুন (সিএইচসিপি), ইকবাল হোসেন (সিএইচসিপি), শহিদুল ইসলাম (সিএইচসিপি), রুবেল হোসেন( মাশরাফি ফাউন্ডেশন)। করোনাকালে তারা মানুষ কে যেমন সেবা দিচ্ছেন, তেমনি দিচ্ছেন সাহস। ফলে রোগীদের বাড়ছে মনোবল। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের বেশ কয়েকজনও বর্তমান সময়ে ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গোপীনাথপুর গ্রামের শেখ বদরুল আলম টিটো, লক্ষীপাশা গ্রামের শরিফুজ্জামান সহ বিভিন্ন লোকের সাথে কথা বলে ও খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শরীফ শাহাবুর রহমান একজন সাহসী এবং সাদা মনের মানুষ। কোন রোগী চিকিৎসা নিতে এলেই তাকে দেখে বলে ফেলেন, ভাল হয়ে যাবেনে। ভয় নাই। আবাশিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন ঠান্ডা মাথায় রোগীর কথা শোনেন। তারপর চিকিৎসা। ডাঃ আবুল হাসনাত রোগীদের হরহামেসাই বলেন, ভয় পান ক্যান। সাইরে যাবেনে। ডাঃ মোঃ কামরুল ইসলাম ও ডাঃ রিপন কুমার ঘোষ, ডাঃ সুমনা খানম অন্যদের মতই নরম প্রকৃতির মানুষ। তারা করোনা রোগীর চিকিৎসায় বেশ খাঁটছেন। মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট প্রশান্ত কুমার ঘোষ ও সুষমা বালা মল্লিক করোনার সূচনা লগ্ন থেকে করোনা সন্দেহভাজনদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহে যেন রেকর্ড গড়েছেন। অসীম সাহসী যোদ্ধা তারা। করোনাকালে কুঁড়িয়েছেন এলাকার মানুষের অফুরন্ত ভালবাসা। সিএইচসিপি লুনা খাতুন, লাইলাতুন খাতুন, ইকবাল হোসেন, শহিদুল ইসলাম, স্থানীয় যুবক রুবেল হোসেন করোনা সন্দেহভাজনদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। লোহাগড়া হাসপাতালে বর্তমানে যারা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তারা সকলেই যেন একটা পরিবার হয়ে কাজ করছেন। রোগীদের উৎসহ-উদ্দিপনা, মনোবল বৃদ্ধি করছেন তারা। হরহামেশাই রোগীরা সুস্থ হচ্ছেন । করোনাকে পরাজিত করে সদ্য সুস্থ হওয়া রাজুপুর গ্রামের চঞ্চল শেখ বলেন, আক্রান্ত হবার পর কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তাররা চিকিৎসা সেবা দেবার পাশাপাশি মনোবল বৃদ্ধিতে সাহস যুগিয়েছেন। রোগী সুস্থ করবার ক্ষেত্রে তাদের কৌশল ভাল লেগেছে। আবাশিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, করোনা রোগীর চিকিৎসা ও নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে ৫জন ডাক্তার, ৩জন নার্স, ৩জন ওয়ার্ড বয় এবং ৫জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা পরে সুস্থ হয়েছেন। ডাঃ রিপন কুমার ঘোষ জানান, গত শনিবার(১১ জুলাই) পর্যন্ত লোহাগড়া উপজেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২২৫ জন। এর মধ্যে লোহাগড়া পৌর এলাকায় ১৩০ জন। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে মোট ৯৪৫ জনের। সুস্থ্য হয়েছেন ৭০ জন। বাকিরা চিকিৎসাধীন। সূত্র জানায়, লোহাগড়া পৌর এলাকায় করোনা রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় ৮ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। চলবে ২১ জুলাই পর্যন্ত । এই সময়ে লোহাগড়া পৌরসভা এলাকার ওষুধের দোকান, সার-কীটনাশকের দোকান ব্যাতিত সকল ধরনের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। কাঁচামাল ও মাছের দোকান ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। পৌর এলাকায় ভ্যান, ইজিবাইক, জি,এস, গাড়ীসহ সকল থ্রি হুইলার পরিবহন বন্ধ রয়েছে। রোগীদের শরীর থেকে সরাসরি নমুনা সংগ্রহকারী ডাঃ মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, লোহাগড়া হাসপাতালে বেশ কয়েকজন সিএইচসিপি কর্মী আমাদেরকে করোনা সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহে সহযোগিতা করছেন। যে কারনে আমরা অনেক সংখ্যক লোকের নমুনা নিতে পারছি। তাদের অবদান অনেক। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শরীফ শাহাবুর রহমান বলেন, করোনায় ভয় পাবার কিছু নেই। মহান আল্লাহর রহমতে আমরা সবাই মিলে করোনা যুদ্ধে জয়ী হবো। তিনি জানান, আমাদের জানা মতে, লোহাগড়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখনো পর্যন্ত কেউ মৃত্যুবরণ করেনি। বরং আক্রান্ত রোগীরা সুস্থ্য হচ্ছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here