যশোরে মাদক মামলার ছড়াছড়ি অযথা হয়রানি হাইকোর্টের নির্দেশে আশার আলো ভূক্তভোগী পরিবারে

0
196

মালেকুজ্জামান কাকা, যশোর : যশোরে প্রায় ২৫হাজার মাদকের মামলায় আসামি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা হয়রানি হচ্ছে। বছরের পর বছর জুড়ে চলছে মামলা। দেশের আদালতে এখন মাদক মামলার ছড়াছড়ি। এসকল মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আসামি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষায় রয়েছে। অবাধ যোগাযোগ ব্যবস্থা, সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় যশোরে সীমান্তপথে মাদকদ্রব্য ব্যাপকহারে প্রবেশ করতে পারে। একারনে প্রশাসনের নজরদারি এখানে বেশি। সঙ্গত কারনে মামলার সংখ্যাও বেশি। বর্তমান সরকারের মাদক বিরোধী তীব্র এ্যাকশনের কারনে মামলার সংখ্যা আরো বেড়েছে। সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কারনে মামলা বাড়ছেই প্রতিদিন। যশোরে প্রায় ২৫ হাজার মাদক মামলা রয়েছে। এর বেশিরভাগ যশোরের আদালতে চলছে। কিছু মামলা রাজধানী ঢাকা, নড়াইল, ঝিনাইদহ সহ অন্য জেলায় রয়েছে। এই মুহুর্তে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারসহ সারা দেশের কারাগারে মাদক মামলায় এই অঞ্চলের মানুষের সংখ্যা বা কারাবরনকারী নারী পুরুষের সংখ্যা অনেক। সঠিক তথ্য মেলানো বেজায় দুষ্কর। অনেক শিশুও তার মায়ের সাথে মাদক মামলায় কারাগারে বন্দীত্ব জীবন যাপন করছে। যশোরের পুলিশ বলেছে মাদকের সাথে কোন আপোষ নেই প্রশাসনের। সরকার আন্তরিকভাবে চাইছে মাদক মুক্ত বাংলাদেশ। এটিও জাতির জন্য ইতিবাচক। ফলে আগের তুলনায় মাদকের মামলা গত কয়েক বছরে অনেক বেড়েছে। জেলার শার্শা উপজেলার ১নং ডিহি ইউপি’র ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বর তরিকুল ইসলাম তোতা বলেন, ১৯৬০ সাল থেকে আমার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। আমার পিতা মৃত সাইফুল ইসলাম জীবিত অবস্থায় মেম্বর ছিলেন। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ ৪০ বছর। এখন আমি মেম্বর পাশাপাশি কৃষি কাজ করি। আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র প্রানপ্রিয় দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। আমি বর্তমানে শালকোনা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক। আমার আপন ভাই তৌফিকুল ইসলাম কাকু একই ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারন সম্পাদক। আমার আপন আরেক ভাই শরিফুল ইসলাম যশোর জেলা ছাত্রলীগে ছিলো। আমার পরিবারের কেউ ব্লাক করেনা। অর্থাৎ কেউ চোরা কারবারিতে জড়িত নয়। তারপরেও আমাকে অবৈধ মাদকদ্রব্য ফেন্সিডিল মামলায় চিহ্নিত মাদক কারবারিদের সথে ফাঁসানো হয়েছে। আমার সাথে সাথে আমার পরিবারের সকলেই এখন টেনশনে। কতদিন যে আমাদের মামলায় হাজিরা দিতে হবে তা নিয়েই আমাদের তীব্র দুশ্চিন্তা। যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিম পাড়ার গাড়ির হেলপার আসাদ (পিতা-হায়দার আলী) শারিরীক প্রতিবন্ধী। সে কানে কম শোনে। দুই বার ডাক দিয়ে তার সাড়া না পেয়ে পুলিশ তাকে ধরে মারধোর করে শতাধিক পিচ ইয়াবাসহ চালান দেয় পুলিশ। রেলগেট তেতুলতলা মুজিব সড়কে গাড়ি টার্মিনালে রেখে বাড়ি ফেরার পথে রাত সাড়ে দশটার দিকে ঘটনাটি ঘটে। তার পিতা মাতা উভয়েই শারিরীক প্রতিবন্ধী। সঙ্গত কারনে এই মামলায় তাদের হয়রানি হচ্ছে। বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য মাদকের বিরুদ্ধে। তবে কোথাও ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। তবে সেই অনিয়ম হয় চুপিসারে। নইলে প্রশাসন পুলিশ বলেও অনেক ক্ষেত্রে ছাড় দিচ্ছে না। তবে ঘটনাটি এক মাস আগের। যশোরে মাদক মামলায় পুলিশের এসআই হাসানুজ্জামানকে একদিনের রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দেন বিজ্ঞ আদালত। ১৬ জুন যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মঞ্জুরুল ইসলাম শুনানি শেষে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আগের দিন রাতে কেশবপুর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। হাসানুজ্জামান যশোরের চৌগাছা থানায় এসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সাতীরা কলারোয়া উপজেলার সিংগা গ্রামের বাসিন্দা।
গাঁজা বিক্রিতে জড়িত সন্দেহে এসআই হাসানুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ১৫জুন/২০২০ তারিখে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেশবপুরের ভাল্লুকঘর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই দিবাকর মালাকারের নেতৃত্বে চাঁদড়া গ্রামে অভিযান চালানো হয়। এ সময় দুইটি মোটরসাইকেলে আসা তিনজনের কাছে থাকা ব্যাগের মধ্যে দুই কেজি এবং মোটরসাইকেলে সেটিং করা এক কেজিসহ তিন কেজি গাঁজা পাওয়া যায়। এসআই হাসানুজ্জামানকে গ্রেফতার করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা কেশবপুর থানার ওসি (তদন্ত) শেখ ওহিদুজ্জামান। তাকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিচারক তাকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সে সময়। এদিকে আশান্বিত হচ্ছে অনেকেই। হাইকোর্ট আমলে নেওয়া মামলা ছয় মাসে নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত দেওয়ায় অনেকে হয়রানি থেকে বেঁচে যাবে। বিশেষ করে যারা হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফেঁসে গেছেন তাদের আশা এখন ব্যাপক। অতি সম্প্রতি জেলার শার্শা উপজেলায় একজন নির্বাচিত জন প্রতিনিধি তরিকুল ইসলাম তোতাকে এই ধরনের একটি ফেন্সিডিল মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ তুলেছে তার পরিবার। মামলা নম্বর -৮/১৭৪, তাং-০৭/০৭/২০২০। জিআর ১৭৪/২০২০। মামলার এজাহারে উল্লেখ, ৩৬(১) এর ১৪ (গ) মাদদদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৮ অবৈধ মাদকদ্রব্য ফেন্সিডিল ক্রয় বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নিজ হেফাদজদতে রাখার অপরাধ। উদ্ধার ৩৯২ বোতল ফেন্সিডিল যার মূল্য ১,৫৬,০০০ টাকা। মামলার আসামি তিনজন। ১. ফুলছদ্দিন খাঁ (৪৫), পিতা- সুলতান খাঁ, সাং-পাকশিয়া (খাল পাড়া) ২. তরিকুল ইসলাম তোতা (বর্তমান মেম্বর (৪৭) পিতা- মৃত সাইফুল ইসলাম শালকোনা পূর্ব পাড়া ৩. তরিকুল ইসলাম (৩৭), পিতা- মৃত আ: আজিজ, গ্রাম-শালকোনা, সর্ব থানা শার্শা, জেলা যশোর। মামলার বাদি হলেন মো: আমজাদ হোসেন, হাবি: নম্বর -৫৪৪১৯, ৪৯/বি কোম্পানী শালকোনা বিওপি। শার্শা থানার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) বদরুল আলম খান, বিপি- ৬৭৯৫০০৮১০৪ মামলাটি রজ্জু করেছেন। স্থানীয়রা জানান, মামলার ১ ও ৩ নং আসামি চিহ্নিত মাদক কারবারি। কিন্ত ২নং আসামি কে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে এ মামলায় ফাসানো হয়েছে। বিচারিক আদালতে অভিযোগ আমলে নেওয়া মাদকের মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মাদক সংক্রান্ত এক মামলার আসামির জামিন শুনানিতে এমন আদেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি/২০১৯ এ আদেশ দেন। আদালতে ওই আসামির পে ছিলেন আইনজীবী মো. ফজলুর রহমান। রাষ্ট্রপে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ। পরে ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর মাদারীপুরে রাজৈরের জনৈক মিজানুর রহমান বাড়ৈকে ৬০০ ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। সেই দিন থেকে তিনি কারাগারে আছেন। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত কোনো স্যাগ্রহণ হয়নি। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন। এ আবেদনে শুনানিকালে বিচারিক আদালতে অভিযোগ আমলে নেওয়া মাদকের মামলা ছয় মাসের মধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ‘ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির েেত্র জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। এ েেত্র ব্যর্থ হলে তাদের জবাবদিহীতার আওতায় আনতে বলা হয়েছে। উচ্চ আদালতের এ আদেশ সংশ্লিষ্ট আদালত, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রতি জারি করতে রেজিস্ট্রার জেনারেল ও আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আদালত আসামি মিজানুরকেও জামিন দিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here