এম হাসান মাহমুদ চৌগাছা (যশোর) ॥ সোনালী আঁশ পাট, সেই পাট চাষ করে স্বপ্ন ভঙ্গের আশংকায় রয়েছেন সীমান্তবর্তী উপজেলা যশোরের চৌগাছার কৃষকরা। প্রাকৃতিক দূর্যোগে সে ভাবে পাট বেড়ে না উঠা, অসময়ে এসে পাট ক্ষেতে পোকার আক্রামন সর্বপরি পাটকল বন্ধ হওয়ার খবরে সোনালী আাঁশের কাংখিত মূল্য পাবে কিনা এই নিয়ে মহাদুঃশ্চিন্তায় দিন পার করছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর উপজেলাতে ২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল এ বছরও ২ হাজারের কিছু বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। কৃষি অফিসের লক্ষমাত্রা অনুযায়ী পাট চাষ হয়েছে। উপজেলাতে যে পরিমান পাট চাষ হয়েছে তার ৯৫ শতাংশ ভারতীয় জিআরও ৫২৪ জাতের পাট বলে জানা গেছে। বাকি জমিতে স্থানীয় জাতের পাট চাষ করা হয়েছে। তবে এ বছর তোষা পাট-৮ (রবি-১) এই নতুন জাতের কিছু পাট চাষ করা হয়েছে। যদি কাংখিত ফলন হয় তাহলে এই পাট চাষ আগামীতে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। গতকাল উপজেলার স্বরুপদাহ, নারায়নপুর, সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এই সব এলাকার মাঠে ব্যাপক ভাবে পাট চাষ হয়েছে। যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই সোনালী আঁশ পাট ক্ষেত চোখে পড়ে। এ সময় কথা হয় মাশিলা লক্ষিপুর গ্রামের চাষি পিন্টু মিয়ার সাথে। তিনি জানান, এক সময় পাটের দাম না পেয়ে মানুষ পাট চাষ বহুলাংশে কম করে দিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আবারও পাট চাষ হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে পাটের দাম ভাল পাওয়ার কারনে চাষ বেড়েছে বলে মনে করছেন ওই কৃষক। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। কিন্তু পাটের ফলন ও দাম নিয়ে এখনই বেশ চিন্তিত। শুনেছি দেশের পাটকল গুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যদি পাটকল বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কি সঠিক বাজার মূল্য পাব। তিনি জানান, ১ বিঘা পাট চাষ করতে যেয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। ভাল ফলন হলে ১০/১২ মন পাট বিঘা প্রতি পাওয়া যায়। এবছর পাটের ভাল ফলন না হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে ওই কৃষক মনে করছেন। স্থানীয় একাধিক কৃষক জানান, এ বছর যেমন তাপমাত্রা বেশি ছিল, তেমন থেমে থেমে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার কারনে পাট স্বাভাবিক গতিতে বেড়ে উঠতে পারেনি। তাই কাংখিত ফলন না হওয়ার সম্ভবনা বেশি। বর্তমানে বাজারে ১ মন পাট ১৫’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দু’এক দিনের মধ্যে পাট কাটা শুরু হবে। নারায়নপুর ইউনিয়নের কৃষক মেহের আলী জানান, এ বছর সার, কিটনাশকসহ অন্যান্য খরচ বেড়েছে। এর উপর শেষ সময়ে এসে ক্ষেতে বেশ পোকা মাকড়ের আক্রমনও দেখা যাচ্ছে, সেই সাথে প্রাকৃতিক দূর্যোগে পাট স্বাভাবিক বেড়ে উঠতে পারেনি। সব মিলিয়ে পাট চাষ করে এ বছর লাভের চেয়ে হয়ত লোকসান গুনতে হতে পারে। কৃষক জমিতে বীজ বপন করে তখন থেকে স্বপ্ন দেখেন এই ফসল ঘরে উঠলে তা বিক্রি করে ওই টাকা দিয়ে কি করা হবে। ঠিক তেমনি ভাবে এবছর পাট চাষ করেও প্রতিটি গ্রামের কৃষকরা স্বপ্ন দেখেছেন পাট উঠার পর তা বিক্রি করে তারা কে কি করবেন, কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের সেই স্বপ্ন অনেকটাই মলিন হয়ে গেছে বলে কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচউদ্দিন জানান, উপজেলাতে পাট চাষ লক্ষমাত্রা অর্জন হয়েছে। প্রাকৃতিক কিছু কারনে যেমন ঘনঘন বৃষ্টি ও অতি গরমে পাট তার স্বাভাবিক গতিতে বেড়ে উঠতে পারেনি। এ নিয়ে কৃষক বেশ দুঃশ্চিন্তায় আছেন। তারপরও ফলন আশানুরুপ হবে বলে তিনি মনে করছেন।