যশোর : যশোর শহরে হরহামেশাই চলাচল করতে দেখা যায় ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা, ইজি বাইক ও অন্যান্য যানবাহন। পৌরসভার পরিসংখ্যান অনুযায়ী যার পরিমান বিগত বছরে বেড়েছে কয়েকগুন। এই সকল যানবাহন গুলির প্রতিটিতে রয়েছে মারাত্মক ক্ষতিকর হর্ণ। যার ক্ষতির মাত্রা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও ইজিবাইকের চালকদের। হর্ণের এই তীব্র শব্দে হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বৃদ্ধি পায়। শব্দদূষণের কারণে হৃদরোগ, অনিদ্রা, মাথাধরা-মাথাব্যথা, এমনকি অস্বাভাবিক আচরণ করার মতো নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। উচ্চ শব্দে ছোট শিশুদের ওপরও মারাত্মক প্রভাব পড়ে। ক্রমাগত উচ্চমাত্রার শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস করে, রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, হৃদযন্ত্রের কম্পন বৃদ্ধি করে, গর্ভবতী মায়েদের মৃত সন্তান জন্ম দেয়ার শঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। শব্দদূষণ হজমপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে এবং মাংসপেশিতে খিঁচুনির সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কোন রকম জ্যাম ! সামনে যানবাহন/মানুষ পেলেই সজোরে মরণঘাতি হর্ণ চেপে বসেন চালকরা। সঠিক জ্ঞান ও হর্ণ প্রয়োগের নীতিমালা না থাকায় হরহামেশাই বাজিয়ে চলেছে প্রয়োজন অথবা অপ্রয়োজনেই। যার ক্ষতিকর প্রভাবে পড়তে চলেছি আমরা ও ভবিষ্যত প্রজন্ম। বিশেষজ্ঞদের মতে হঠাৎ ১৪০ ডেসিবল শব্দমাত্রা আমাদের কানে বা শ্রবণেন্দ্রীয়তে প্রচন্ড ব্যথা তৈরি করতে পারে। ১৯০ ডেসিবল মাত্রা শ্রবণ শক্তি একেবারে নষ্ট করে দিতে পারে। শহরের বিভিন্ন স্থানে শব্দদূষণের মাত্রা ৮০ থেকে ১১০ ডেসিবল পর্যন্ত। কোন কোন স্থানে ১১০ ডেসিবলের চেয়েও বেশি এবং এই মাত্রা ক্রমান্বয়ে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। ৬০ ডেসিবেলের বেশি মাত্রার মধ্যে দীর্ঘদিন বাস করলে শ্রবণশক্তি কমে যায়। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ এ অনুসারে, ৫টি আলাদা আলাদা অঞ্চল নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে – নিরিবিলি এলাকা, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, শিল্প এলাকা ও মিশ্র এলাকা। এসকল এলাকা সম্পর্কে কোন জ্ঞানই রাখেন না এসকল চালকরা। হরহামেশাই যেখানে সেখানে হর্ণ চেপে বসে। সঠিক জ্ঞান নেই, জানার সুযোগ নেই। আবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগণ এসকল বিষয়ে কর্ণপাত করারই চেষ্টা করেন না। কারণ তারা চলেন এয়ার টাইট গাড়ী, থাকেন গ্লাস দিয়ে আবৃত বাসভবনে, অফিস করেন এসি রুমে বসে, যেখানে মারাত্মক ক্ষতিকর হর্ণ এর শব্দ প্রবেশ করতে পারে না। এসকল ভোগান্তি যে জনসাধারণ পোহায় সেটায় তাদের কাছে অজানা। ভবিষ্যতের সুন্দর একটি প্রজন্ম গড়ে তোলার বাধা হয়ে দাড়ানো এই শব্দ দূষণকে পরিবেশবিদরা “শব্দ সন্ত্রাস” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এবার আসা যাক বিশ্বব্যাংক কি বলছে ?- বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৬% মৃত্যু হয় পরিবেশ দূষণজনিত অসুস্থতার কারণে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী গড় মৃত্যুর হার মাত্র ১৬ শতাংশ। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সারা দেশে ২০ শতাংশ মানুষ বধির। এবং ২০ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ শিশু। প্রায় ১১ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের শ্রবণ সমস্যা রয়েছে। আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষ শব্দ দূষণের কারণে হতাশা ও উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
২০০৬ সালে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণীত হলেও এর কোন প্রয়োগ নেই বললেই চলে। পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এর ২৫, ২৭ ও ২৮ ধারা মতে শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদ- ও কারাদ- উভয় প্রকার শাস্তির বিধানই রয়েছে। বিধি-বিধান থাকলেই হবে না তার যথাযথ প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান, অধিদফতর এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, পৌরসভা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে সমন্বিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।