মনিরুল হুদা, জামতলা (শার্শা) প্রতিনিধি : যশোরের শার্শায় মুখিকচু (সারকচু) চাষ লাভজনক হওয়ায় এ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। কচু চাষে তুলনামূলক সার কম লাগে। এছাড়া রোগবালাই কম, উৎপাদন ভালো ও স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য পাইকারি বাজার আছে। তাই নিয়মিত কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের উৎসাহ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মুখিকচু চাষে আগ্রহ বাড়ায় এ কাজে নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্যদের খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। সব মিলিয়ে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় প্রতি মৌসুমে বৃদ্ধি পাচ্ছে মুখিকচু চাষ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়- চলতি বছর শার্শা উপজেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে মুখিকচু সবজি চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় রোগবালাই কম। কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় গত বছরের চেয়ে এ বছর ৫ হেক্টর বেশি জমিতে মুখিকচুর চাষ হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নে ৮৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে কেরালখালী-বাসাবাড়ি, বসন্তপুর-পাড়িয়ারঘোপ, কন্দর্পপুর-ভায়না এলাকায়ই ৫০ হেক্টর জমিতে মুখিকচুর চাষ হয়েছে।
উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়- শত শত বিঘা জমিতে দেশি ও উচ্চ ফলনশীল জাতের মুখিকচু চাষ করা হয়েছে। সেই কচুর সবুজ পাতা-গাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে।
বাসাবাড়ি বাজারে কথা হয় পাড়িয়ারঘোপ গ্রামের মুখিকচু চাষি সিদ্দিক বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন- এ বছর সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে মুখিকচু চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং তেমন কোনো রোগবালাই না হওয়ায় প্রতি বিঘায় আনুমানিক ৭০-৮০ মণ কচু উৎপাদন হবে। কচু তোলার সময় বৈরি আবহাওয়া না হলে সব খরচ বাদ দিয়ে ২ লক্ষাধিক টাকা লাভ হবে।
পাড়িয়ারঘোপের আবু জাফর ও আবদুল্লাহ, কেরালখালির বাবু, মিজান, তোতা, ইমরান, সালাম ও বিপ্লব, ভায়নার আজগার, বসন্তপুরের সাধন ও নৈহাটি গ্রামের তবিসহ বেশ কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান- কৃষি কর্মকর্তাদের উৎসাহ ও পরামর্শ অনুযায়ী মুখিকচু চাষ করে তারা গত বছর বেশ লাভবান হয়েছিলেন। এ বছরও চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন। সেই সঙ্গে ভালো দাম পাওয়ারও আশা করছেন। বিঘাপ্রতি ৪০-৪৫ হাজার টাকা লাভ হবে বলে মনে করছেন তারা।
এ কাজে এলাকার নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্যরা কচুর পরিচর্যা, কচু তোলা, পরিষ্কারসহ পরিবহনে খণ্ডকালীন কাজ করছেন। এ কাজ করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করে তারা কিছুটা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
ভায়না গ্রামের গোলাম হোসেন বলেন- এ বছর দেড় বিঘা জমিতে মুখিকচু চাষ করেছি। আগাম কচু তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু করেছি। কেজিপ্রতি দাম ৭০-৮০ টাকা। প্রতি কাঠায় তিন মণ কচু পাচ্ছি। কচুর দাম ও ভালো ফলন পেয়ে আমি খুশি।
বাসাবাড়ি বাজারের হালিমা ট্রেডার্সের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন- বর্তমানে চাষিরা পুরোদমে মাঠের মুখিকচু না ওঠালেও স্থানীয় বাজারে কয়েকজন কৃষক কচু তুলতে শুরু করেছেন। শুরুতে দামও বেশ চড়া। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই পুরোদমে বাসাবাড়ি পাইকারি বাজারে শত শত মণ কচু উঠতে শুরু করবে।
এ বাজারে শার্শা উপজেলা ছাড়াও ঝিকরগাছা উপজেলার চাষিরাও উৎপাদিত কচু গত বছরের ন্যায় এ বছরও পাইকারি হিসেবে বিক্রি করবেন। তখন প্রতিদিন এ বাজারের ৩০-৩৫টি আড়ৎ থেকে হাজার মণ কচু পাইকাররা ট্রাক-পিকআপযোগে সিলেট, ঢাকা, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, মাগুরা, যশোর ও সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাবেন।
বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকেরা ভ্যান, ইজিবাইক, নছিমনযোগে কচু বাজারে নিয়ে আসবেন। এ সময় চাষি, আড়ৎদার ও পাইকারদের হাকডাকে মুখরিত হয়ে উঠবে বাসাবাড়ি পাইকারি বাজার।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অসিত কুমার মন্ডল বলেন- মুখিকচু চাষে উদ্বুদ্ধ করা ও নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে কচু চাষ। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে পুরোদমে কচু উঠতে শুরু করবে। নিজামপুর ইউনিয়নের মধ্যে আমার ব্লক এলাকায়ই সবচেয়ে বেশি ৫০ হেক্টর জমিতে কচু চাষ করা হয়েছে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মন্ডল বলেন- মুখিকচু চাষে কোনো মাঠ প্রদর্শনী নেই। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা থাকবে। সব সময় সরকার সব কিছু দেন না। যখন যেটা দেন, আমরা সেটা চাষিদের দিয়ে থাকি।