লক্ষীপাশা(নড়াইল)প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়ায় বর্তমান অবস্থান ঠিক রেখে নবগঙ্গা নদী পুনঃখননের দাবিসহ করোনা মহামারীর মধ্যে অন্যায় ও অযোক্তিকভাবে ভূমিহীনদের জোরপূর্বক উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার(৩জুন) দুপুরে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ গেটের সামনে নবগঙ্গা ভূমিহীন অধিকার আন্দোলন এর আয়োজনে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মৃতপ্রায় নবগঙ্গা নদীর নাব্যতা ফেরাতে পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নদীটি পুনঃখনন করলে নলদী থেকে মহাজন পর্যন্ত নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় চালু হবে। তেমনি নদী পাশর্^বর্তী কৃষকরা ফসল চাষে বিশেষ সুবিধা পাবে। নদীর পাশর্^বর্তী বাসিন্দারা নদীর পানি দিয়ে গোসলসহ-গৃহস্থলির সব কাজই করতে পারবে। বাড়বে মৎস্য সম্পদ। জেলেরা বছর ভরেই মাছ শিকার করতে পারবে। নবগঙ্গা ভূমিহীন অধিকার আন্দোলনের সভাপতি শেখ লায়েক আলী এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডঃ শেখ হাফিজুর রহমান, সিপিবি নেতা বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক সেকেন্দার হায়াত, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি নড়াইল জেলা সভাপতি কৃষক নেতা বিএম. বরকত উল্লাহ, সংগঠনের কার্যকরি সভাপতি তুহিন চৌধুরী, নবগঙ্গা ভূমিহীন অধিকার আন্দোলনের সাধারন সম্পাদক মোঃ টুলু শেখ, সাদিকুর রহমান প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে নদী পুনঃখননের কাজ বন্ধ করতে হবে এবং আর,এস রেকর্ড অনুযায়ী নদীর সীমানা পূন:নির্ধারন করে নদীর বর্তমান অবস্থান ঠিক রেখে নবগঙ্গা নদী খনন করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ ভূমিহীনদের পুনঃর্বাসন বা ক্ষতিপূরন দিয়ে নদী খননের কাজ করবার দাবি জানান বক্তারা। উল্লেখ্য, গতবছর ২০ আগষ্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ(একনেক) এর সভায় ৩০৩ কোটি টাকা ব্যায়ে নড়াইল জেলার মধুমতি-নবগঙ্গা উপ-প্রকল্প পূনর্বাসন ও নবগঙ্গা নদী খনন/পূন:খনন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প পাশ হয়। ওই প্রকল্পের অংশ হিসেবে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সিএস রেকর্ড অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারন করে নবগঙ্গা নদীর পুনঃ খনন কাজ শুরু করেছে। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, নদী পুনঃখনন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সাড়ে ৮হাজার পরিবার চরম আতংকে দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। এলাকার মানুষের দাবি সিএস রেকর্ড অনুযায়ি নদী খনন না করে আরএস রেকর্ড অনুযায়ী নদীর বর্তমান অবস্থান ঠিক রেখে নদী খনন করা হোক। এ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিএস রেকর্ড দেখে নদী খনন করলে ১০টি মসজিদ, ৫টি কবরস্থান, ৩টি শ^শান, ৫টি মন্দির, ২টি কাব, ৯টি ব্রীজ সহ সাড়ে ৮ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ্যাডঃ আব্দুস ছালাম খান ও এ্যাডঃ আকরামুল ইসলাম আকরাম বলেন, নদীর পাড়ে সরকারিভাবে বন্দোবস্ত নেয়া পরিবারগুলোও ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
ভূমিহীন রওশনআরা বলেন, নদীর চরে খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে বাস করছি। এখন যেখানে মাপ ধরেছে তাতে ঘরবাড়ি নদীতে যাবে। আনোয়ারা, কোমেলা, আয়াতুন্নেছা বলেন, আমরা ভূমিহীন ছিলাম। সরকার খাস জমি আমাদের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে। আমরা ঘর বানাইছি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড যেখানে মাপ ধরেছে তাতে আমরা নদীর মাঝে চলে যাবো। মুসা শেখ, আল মামুন মোল্যা সহ অন্যরা দাবি করেন বর্তমান নদীর অবস্থান দিয়েই খনন করা হোক। তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হবো না। পানি উন্নয়ন বোর্ড নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ নেওয়াজ তালুকদার বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক নদী পুনঃখনন কাজ চলছে। ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের। যারা মানববন্ধন, সমাবেশ করছেন তাদের কোন দাবি থাকলে জেলা প্রশাসকের নিকট করতে হবে। ওই বিষয়টি আমার দপ্তরের নয়।