স্ত্রীর অনৈতিক কর্মকান্ডে বাধাঃ স্বামী খুন

0
380

গত ০৯/০৫/২০২০ খ্রিঃ তারিখ দিবাগত রাতে শ^শুর বাড়ির পাশর্^ থেকে ভ্যান চালক মোঃ ইবাদুল ইসলাম @ ইবাদ শেখ (৩৬), পিতাঃ মোঃ সবুর শেখ, সাং-ফুলদহ, থানাঃ কালিয়া, জেলাঃ নড়াইল এর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এ সংক্রান্তে কালিয়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা নং-০৭/২০২০, তারিখ-১০/০৫/২০২০ খ্রিঃ রুজু হয়। পিবিআই যশোর জেলা ক্রাইসিন টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর বিষয়ে কিছু অসংগতি সনাক্ত হওয়ায় মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা অব্যহত রাখেন। পিবিআই যশোর জেলা ভিকটিম ইবাদুল ইসলামের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে পারিবারিক কলহের বিষয়টির উপর গুরুত্ত্বারোপ করে। তদন্তের ধারাবাহিকতায় ডিআইজি পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক ত্ত্ববধান ও দিক নিদের্শনায়, পিবিআই যশোর জেলার ইউনিট ইনচার্জ জনাব এম, কে, এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম এর নেতৃত্ত্বে পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) গাজী মাহ্বুবুর রহমানসহ যশোর জেলার আভিযানিক দল ভিকটিমের স্ত্রী আমেনা বেগমসহ ০৩(তিন) জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আমেনা বেগম হত্যাকান্ডের সহিত সে একাই জড়িত মর্মে স্বীকার করলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ভিকটিম ইবাদুল ইসলাম এর স্ত্রী আমেনা বেগম (৩০), পিতাঃ মৃত ছিদ্দিক ফকির, গ্রামঃ জামতলা, সাং-কালিয়া, জেলাঃ নড়াইল, জিজ্ঞাসাবাদে জানায় প্রায় ১৩/১৪ বছর পূর্বে তার সাথে ইবাদুল ইসলামের বিয়ে হয়। তাদের ২টি পুত্র ও ০১টি কন্যা সন্তান আছে। নিহত ইবাদ শেখ মাদক সেবন করতো এবং মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। তার অন্য কোন উপার্জনের মাধ্যম ছিল না। বিবাহের পর হতে তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়শই ঝগড়া বিবাদ হতো। এই বিষয়ে উভয়ের মধ্যে চরম আকারে বিরোধ দেখা দেয়। অনুমান ০১ বছর পূর্বে নিহত ইবাদ শেখ মাদক মামলায় গ্রেফতার হলে তার স্ত্রী আমেনা তিন সন্তানসহ আমতলাস্থ তার বাপের বাড়ীতে চলে যায়। মাঝে মধ্যে নিহত ইবাদ স্ত্রীকে তার বাড়ীতে নিয়ে আসতো এবং কখনও কখনও রাত্রে গিয়ে শ্বশুর বাড়ীতে থাকতো। ঘটনার দিন গত ০৯/০৫/২০২০ খ্রিঃ তারিখ রাত্রী অনুমান ১০:০০ টার সময় ইবাদ শেখ নিজ বাড়ীতে ছিলো। রাত্রী অনুমান ১০:০০-১০:৩০ মিনিটের মধ্যে ইবাদের মোবাইলে স্ত্রী আমেনা ফোন করলে ইবাদ শশুর বাড়ীতে চলে যায়। রাত ১২:০০ টা পর্যন্ত অবস্থান করার পর তার স্ত্রী তাকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু ইবাদ ঐদিন তার স্ত্রীর সাথে শ^শুর বাড়িতে থাকতে চায়। উল্লেখ্য যে, নিহতের স্ত্রী দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। যা তার স্বীকারোক্তি এবং মোবাইল ফোনের কথোপকথন থেকে সত্যতা পাওয়া যায়। ঘটনার রাত্রে তার স্ত্রীর কাছে ০২ জন খরিদ্দার আসার জন্য যোগাযোগ করছিল। কিন্তু নিহত ইবাদ শেখ শ^শুর বাড়িতে অবস্থান করার কারণে তারা ০২ জন আসতে পারছিল না। আমেনা বেগম জানায়, নিহত ইবাদ শেখ সেই রাত্রে অনেক মাদক সেবন করেছিল এবং তারা দুই জনই দুধের সাথে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করেছিল। এক পর্যায়ে নিহতের স্ত্রী তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ঘরের বাহিরে গেলে তখন নিহত ইবাদ শেখ মাটিতে বসে পড়ে এবং বলে, ‘‘আমি বাহিরে থাকতে হলেও থাকবো’’। তখন নিহতের স্ত্রী তাকে চলে যাওয়ার জন্য জোর পূর্বক ধাক্কা দিলে নিহত ইবাদ শেখ সুপারি গাছের সাথে মাথায় আঘাত লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাছাড়া অতিরিক্ত মাদক সেবনের কারণে সে শারীরিকভাবেও অনেক দূর্বল ছিল, যা আসামীর স্বীকারোক্তিতে জানা যায়। তাৎক্ষনিকভাবে নিহতের স্ত্রী তার স্বামীর কোমরে থাকা গামছা দিয়ে তার গলা বেঁধে একাই কোনমতে টেনে সুপারি গাছের সাথে বাধা বাঁশের সাথে লাশটি ঝুলিয়ে দেয়। ইতিমধ্যে মসজিদের মাইকে সেহরী খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি শুরু হলে অভিযুক্ত আমেনা বেগম নিজ ঘরে গিয়ে অবস্থান করে। পরবর্তীতে ১০/০৫/২০২০ খ্রিঃ তারিখ সকাল বেলা স্থানীয় লোকজন নিহত ইবাদকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে কালিয়া থানা পুলিশকে অবহিত করেন। আসামীর স্বীকারোক্তি এবং ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির পর কালিয়া থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়। মামলা নং-০৪, তারিখঃ ০৮/০৬/২০২০ খ্রিঃ, ধারাঃ ৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। আসামীকে অদ্য ০৯/০৬/২০২০ খ্রিঃ তারিখে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here