সুন্দরবনে ৩৩ হাজার] হরিণ নিধনকারী চোরা শিকারী

0
350

মালেকুজ্জামান কাকা, যশোর : বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ গর্ব সুন্দরবনে ৩৩ হাজারের বেশি হরিণ নিধনকারী চোরা শিকারি চক্রের দৌরাত্ম চরমে পৌছেছে। বন্যপ্রাণী সংরণ আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই বিশ্বের সেরা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের চোরা শিকারিরা নির্বিচারে হরিণ-বাঘ শিকার করছে। শিকারিদের অপতৎপরতা ও দৌরাত্ম চরমে পৌছেছে। গত ৩/৪ বছরে ৩৩ হাজারের বেশি হরিণ নিধন, তিন হাজার ৬৩ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার হয়েছে। মাংসের লোভে প্রতিবছর শত শত হরিণ মারছে চোরা শিকারিরা। এই চক্রের অপতৎপরতা ওপেন সিক্রেট হলেও তাদের দৌরাত্ম্য থামাতে কর্তৃপরে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেই। হরিন –বাঘ শিকার বন্ধে ৩০টি শিকারী চক্রকে সনাক্ত করে তাদের সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। শিকারের পর হরিণের মাংস, চামড়া, মাথা, শিং ও হাড় বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব চক্র। সেই সঙ্গে সুন্দরবনের অভ্যন্তরের নদী-খালে বিষ দিয়ে মাছ ও কাঁকড়া নিধন করছে। এমনকি সরকার ঘোষিত অভয়ারণ্য এলাকায়ও বন্যপ্রাণী নিরাপদে নেই। সুন্দরবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এখন অস্তিত্ব সংকটে। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল সকালে ২২টি জীবিত হরিণ সহ তিন চোরা শিকারিকে আটক করেছে বন বিভাগ। স্মরণকালের বৃহত্তম ২২টি জীবিত হরিণের চালান আটকের ঘটনা এটি। এ সময় ৩০ কেজি হরিণের মাংস, ৭০০ ফুট হরিণ ধরা নাইলনের দড়ির ফাঁদ, দুটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, একটি ডিঙি নৌকাসহ আটক হয়েছে তিনজন শিকারি। ফাঁদে আটকে রাখা জীবিত ২২টি হরিণ তাৎণিকভাবে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। জীবিত হরিণের বৃহত্তম এই চালান ধরা পড়ার পর বন বিভাগে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। এর আগে গত ২৮ মার্চ সুন্দরবনের চরখালী থেকে ৫০০ ফুট ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদ, ১০ এপ্রিল কচিখালী থেকে ৫০০ ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদ, ১৭ এপ্রিল চান্দেশ্বর থেকে ৭০০ ফুট ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদ, ২৩ এপ্রিল শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রাম থেকে ১০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার ও ২ মে ১৫০০ ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদসহ দুই চোরা শিকারিকে আটক করে সুন্দরবনের বনরীরা। তারও আগে গত ২৮ মার্চ সুন্দরবনের চরখালী থেকে ৫০০ ফুট ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদ, ১০ এপ্রিল কচিখালী থেকে ৫০০ ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদ, ১৭ এপ্রিল চান্দেশ্বর থেকে ৭০০ ফুট ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদ, ২৩ এপ্রিল শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রাম থেকে ১০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার ও ২ মে ১৫০০ ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদসহ দুই চোরা শিকারিকে আটক করে সুন্দরবনের বনরীরা। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবনে চোরা হরিণ শিকারীর সব থেকে বড় গ্যাং ইন্টারপোলের তালিকাভূক্ত পাথরঘাটার চরদোয়ানী এলাকার কুখ্যাত চোরা শিকারি মালেক গোমস্তা বন্য প্রানী নিধন করতে তার লোকজন নিয়ে অবৈধ পথে সুন্দরবনে শ্যালারচর-কুকিলমুনি এলাকায় ঢুকেছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীনকে ২৯ এপ্রিল অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এসিএফ জয়নালের নের্তৃত্বে সুন্দরবনের শ্যারারচর, কুকিলমুনি ও জ্ঞানপাড়া কর্মকর্তা ও বনরীরা অভিযানে থাকা কালে সোমবার বিকাল থেকে শুরু করে বড় ধরনের আর একটি অভিযান। সেদিন ভোর রাতে শরণখোলা রেঞ্জের টিয়ারচর এলাকায় তিনটি ট্রলার ও একটি নৌকা আটক করা হয়। ট্রলার থেকে ৩০ কেজি হরিণের মাংসসহ তিন চোরা শিকারিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে টিয়ারচর এলাকায় তল্লাশী চালিয়ে বনের মধ্যে পেতে রাখা ৭০০ ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদে আটকে থাকা ২২টি জীবিত হরিণ উদ্ধার করে বনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এই তিনজন চোরা শিকারির বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলহাজতে পাঠানো হয়। ডিএফও আরো জানান, ইন্টারপোলের তালিকাভূক্ত কুখ্যাত চোরা হরিণ শিকারি মালেক গোমস্তা সুন্দরবনের চিয়ারচর এরাকায় রয়েছে বলে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেছে। আমাদের হাতে আটক হয় মাত্র একমাস আগে কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়া মালেক গোমস্তাকে গ্রেফতারের জন্য সুন্দরবনে এখনো অভিযান চলছে। সুন্দরবনের বুনো মহিষ, পারা হরিণ, বুনো ষাঁড়, ছোট ও বড় একশৃঙ্গি গণ্ডার, বার শিংগা, চিতাবাঘ বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগেই। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সাদা মানিক জোড়া, গগন বেড়, তিতিরসহ ১৬ প্রজাতির বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। বনের ভেতর বনমোরগের ডাক শোনা এখন অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জ সংলগ্ন গ্রামগুলোতে দেড় শতাধিক সংঘবদ্ধ শিকারী দল রয়েছে। এদের অবস্থান বরগুনার পাথরঘাটার চরদুয়ানী, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, রামপাল, মোংলা, মোরেলগঞ্জ, সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা জেলার পাইকগাছা, দাকোপ, কয়রা এবং সাতীরার আশাশুনি, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলায়। এসব শিকারি বনে ঢুকে খাদ্যে বিষ অথবা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে, ফাঁদ কিংবা বন্দুক দিয়ে গুলি করে বাঘ ও হরিণ হত্যা করে। তারপর স্থানীয় পদ্ধতিতে চামড়া, মাংসসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংরণ এবং তা গোপনে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে নিয়ে চোরাচালানিদের ডেরায় পৌঁছে দেয়। স্থানীয় ভাবে একটি বাঘের চামড়ার জন্য শিকারিরা দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পায়। কুমিরের চামড়া, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও বাঘ, হরিণের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দামও অতি চড়া। ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা তাদের জরিপে জানায় বছরে ১১ হাজারের বেশি হরিণ নিধন হচ্ছে। ২০১১ সালে সংস্থাটি সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জে হরিণ শিকার নিয়ে জরিপ চালায়। জরিপের সময় সংস্থাটি বছরে ১১ হাজার ১৯৫টি হরিণ শিকারের তথ্য পায়।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের ভান্ডার সুন্দরবনের অন্যতম আর্কষণ হচ্ছে হরিণ। এভাবে নির্বিচারে হরিণ শিকার চলতে থাকলে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পরবে। তাই জীব বৈচিত্র রার্থে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে কর্তৃপ এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। সুন্দরবন কেবল ১২ লাখ লোকের কর্মসংস্থানেরই উৎস নয়, লাখ লাখ মানুষের বিনোদন ত্রে হয়ে উঠতে পারে এবং এতে আসতে পারে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রাসহ মোটা অংকের রাজস্ব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here