শৈলকূপা ,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : শৈলকুপায় আদিবাসিদের আর্থ সামাজিক অবস্থার জীবনমানের উন্নয়ন সাধনে“যার জমি আছে ঘর নেই” প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্ধে বরাদ্ধকৃত প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে প্রতিটি সেমিপাকা বসতঘর নির্মানে দুইলক্ষ বিশ হাজার টাকা বরাদ্ধের পরও দশটি ঘরনির্মানে দশজনের নিকট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ,ঘরনির্মান কাজেও দেওয়া হয়েছে শুভংকরের ফাঁকি।ঘর বরাদ্ধ পাওয়া নির্বাচিত ব্যক্তিরা হচ্ছে-দিগনগর ইউনিয়নের সুমিত্রা রানী-পিং শ্রী বিমল কুমার সরকার ও সুমিত্রা রানী-পিং নগেন সরকার এবং শ্রী মিঠুন সরকার-পিং দিলিপ সরকার,মনোহরপুর ইউনিয়নের ইতি রানী দাস-পিং শ্রী শ্যামল চন্দ্র দাস ও অসিত দাস-পিং গনেশ দাস,হাকিমপুর ইউনিয়নের সুন্দরী সরকার-পিং মৃত্য অর্জুন সরকার ও বিষ্ণু কুমার সরকার- পিং চিত্তরঞ্জন সরকার,সারুটিয়া ইউনিয়নের শ্রীমতি পুষ্প রানী সরকার-পিং শচিন দাস ও লিটন সরকার-পিং সুভাস কুমার সরকার এবং শ্রীমতি রুপা রানী সরকার-পিং কাঞ্চন সরকার।
সূত্রে জানা গেছে,প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্দোগে আদিবাসিদের জীবনমান উন্নয়নে বসতঘর নির্মানে দুইলক্ষ বিশ হাজার টাকা ঘরপ্রতি বরাদ্ধের পরও প্রত্যেকের নিকট থেকে চল্লিশ হাজার,পঞ্চাশ হাজার,ষাট হাজার করে ঘর বরাদ্ধ বাবদ টাকা ঘুষ গ্রহন করা হয়েছে। গৃহহীন কমল কুমার দাসদের মত উপজেলা নির্বাহী অফিস স্টাফ ইসমাইল ও মিন্টু’র দাবীকৃত টাকা যারা উৎকোস দিতে না পেরেছে তাদেরকে ঘর বরাদ্ধ থেকে বঞ্ছিত করা হয়েছে। উপজেলাতে সাতটি আদিবাসী সমিতি সংগঠন থাকলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসের পছন্দের দুই-তিনটি সমিতির লোকদের টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।
অগ্রগতি আদিবাসি বহুমূখি সমবায় সমিতি,কচুয়া মধুদাহ আদিবাসি কল্যান বহুমূখি সমবায় সমিতি,কুমিড়াদহ আদিবাসি শ্রমজীবি সমবায় সমিতি,হাটফাজিলপুর আদিবাসি মৎসজীবি সমবায় সমিতি ও শৈলকুপা আদিবাসি দারিদ্র বিমোচন সংস্থাকে ব্যতিরেখে দুটি পছন্দের সমিতিকে ঘর বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম কি এ দায়ভার এড়াতে পারেন ? র্
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক বরাবর ২০১৯-২০২০অর্থ বছরের আদিবাসিদের বসতঘর নিমার্নে অর্থ বরাদ্ধে দুর্নীতি প্রসঙ্গে ছয়টি সমিতির যৌথ স্বাক্ষরে একটি লিখিত দরখাস্ত জমাদেওয়া হয়।দরখাস্তে দেখাযায়,উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম কোন রেজুলেশন ছাড়ায় গোপনীয় ভাবে সততা আদিবাসি সমাজ কল্যান সংস্থা তামালতলা রেজিঃনং ৮২৬/০৯ এর সভাপতি রাম সরকার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিস স্টাফ ইসমাইল ও মিন্টুর মাধ্যমে ঘরপ্রতি পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহনে দশটিঘর দশজনকে পাঁচলক্ষ টাকার বিনিময়ে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে বলে দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে,শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী অফিস স্টাফ ইসমাইল ও মিন্টু এবং সততা আদিবাসী সমাজ কল্যান সংস্থা,তামালতলা,রেজিঃ নং-৮২৬/০৯ এর সভাপতি রাম সরকার এর মাধ্যমে বেনীপুর সরদার পাড়ার কল্পনা-১ ও কল্পনা-২ এর নিকট থেকে আদিবাসিদের “যার জমি আছে ঘর নেই” প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পের আওতায় ঘর বরাদ্ধ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে দুই জনের নিকট থেকে পঁচিশ হাজার এবং আঠার হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়েছে।
অগ্রগতি আদিবাসি বহুমূখি সমবায় সমিতির সভাপতি উৎকোচ দিতে না পারায় ঘর বরাদ্ধ থেকে বঞ্ছিত গৃহহীন কমল চন্দ্র দাস বলেন,আদি বাসিদের নামে প্রকল্প করতে আমরা প্রত্যেক সমিতি পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছি।আমরা পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়ার পর প্রজেক্ট পাসহয়ে আছে।প্রজেক্ট আসার পর অফিসে গিয়ে ইউওনো সাহেবকে বললাম স্যার আমার একটা সমিতি আছে পশু হাসপাতালের সামনে।আমরা গরিব মানুষ স্যার আমার সমিতির দিকে একটু লক্ষ রাখবেন।স্যার বললো ঠিক আছে,তোমার প্রতি আমার লক্ষ থাকবে।স্যারের কক্ষ থেকে চলে এসে ইসমাইলের নিকট যায়,তিনি তখন বলেন তুমি চলে যাও আমি ফোন দিবো।দুইদিন পর ইসমাইল ফোন দিয়ে বলে আমাদের মিটিং আছে তুমি এসো।আমি গেলে বলে যে তুমি মিন্টুর সাথে কথা বলো, মিন্টুর সাথে কথা বলা আর আমার সাথে কথা বলা একই কথা।
মিন্টুর কাছে গেলে মিন্টু বলে যে তুমি কি ঘর নিবা।দু’টো ঘর তোমাকে দিতে পারি,একলক্ষ টাকা লাগবে।তখন আমি বললাম স্যার আমি একলক্ষ টাকাদিয়ে ঘর নিবো না।স্যার আমরা কখনো শুনিণী যে টাকা দিয়ে আপনাদের নিকট থেকে ঘর কিনে নিতে হবে,তাহলে স্যার আমি নিবো না,আপনি যেভাবে যাদের পারেন দিয়ে দেন বলে চলে আছি। তিন-চারদিন পর একদিন রাম থানার সামনে থেকে আমাকে ডেকে বললো,চলো শামীম মোল্লার তিনতলার নিচে গিয়ে বসি,সেখানে ইসমাইল আসবে বলে আমাকে নিয়ে সেখানে যায়।কিছুক্ষন পরে সেখানে ইসমাইল আসলো এবং বললো ঘরতো সব রামের নামে তা কমল তুমি কি বলো,ঘর নিতে হলে একলাক্ষ টাকা দিতে হবে।তখন আমি বললাম একলাখ টাকা দিয়ে কোনো ভাবেই স্যার আমি ঘর নিতে পাছি না।তখন তারা চলে গেলেন,আমিও সেখান থেকে চলে আছি।
ইতি রানী দাসের স্বামী শ্রী শ্র্যামল চন্দ্র দাস কানাই বলেন,আমাদের উঠান আর নির্মান ঘরের মেঝে সমান হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলে ঘরে পানি,সাপ-পোকা ডুকেযাবে।ধুলা মাটি দিয়ে এবং সিমেন্ট কম দিয়ে,দুই নাম্বার ইট দিয়ে ঘর নির্মান করা হয়েছে।সরকার দুইলক্ষ বিশ হাজার টাকা ঘরপ্রতি বরাদ্ধ দেওয়ার পরও আমার নিকট থেকে চল্লিশ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। পাকা ঘর পাওয়ার আসায় খুব কষ্ট করে হলেও চল্লিশ হাজার টাকা গুছিয়ে দিয়েছি।
কুমার সরকার,শম্ভু সরদার,গোপাল বিশ্বাস ও দিলীপ বিশ্বাস বলেন,উপজেলা নির্বাহী অফিসের স্টাফ ইসমাইল ও মিন্টু টাকা ছাড়া আদিবাসিদের কোন কাজই করেন না।যে সমিতির সভাপতি তাদের উৎকোচ বেশি দিতে পেরেছে সেই সমিতির লোকদের ঘর বরাদ্ধ দেওয়া হয় শৈলকুপায় এ যাবদ আদিবাসিদের নামে যতটাকা বরাদ্ধ এসেছে প্রায় সময়ই অফিস স্টাফদের মোটা অংকের ঘুষ দেওয়া লেগেছে। আদিবাসিদেও কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে ইসমাইল গড়েছেন অর্থ-সম্পদের পাহাড়।
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন,এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি এবং এমন কোন ঘটনা ঘটেওনি। আমার অফিসের কোন ব্যক্তি এবিষয়ে দায়ি থাকলে প্রমান সাপেক্ষে অবশ্যই টাকা ফেরৎ দেওয়া হবে এবং তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।