সাতক্ষীরার লক্ষিদাঁড়ি থেকে ৩৪ লাখ ৯ হাজার টাকা মূল্যের ৫ পিস স্বর্ণের বারসহ নারী চোরাকারবারী আটক

0
281

ভোমরা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি ঃ আন্তর্জাতিক স্বর্ণ ও হুন্ডি অর্থ (মানি লন্ডারিং) পাচারের নিরাপদ রুটে পরিনত সাতক্ষীরার ভোমরা ও লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্ত। ভারত-বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের চোরাকারবারিরা এই সীমান্তকে চোরাচালানের নির্ভরযোগ্য, অবাধ ও বাঁধাহীন রুট হিসাবে ব্যবহার করছে। লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্তের বিপরীতে ঘোজাডাঙ্গা সীমান্ত এলাকায় রয়েছে স্বণ ও হুন্ডি পাচারের শীর্ষ নেটওয়ার্ক। উভয় দেশের জিরো পয়েন্ট এলাকার মধ্যে গড়ে উঠেছে চোরাচালান সিন্ডিকেটের আস্তানা। সীমান্তের ভৌগোলিক অবস্থানের সীমারেখা অতিক্রম করে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা মূল্যের অমূল্য স্বর্ণ সম্পদ নির্বিঘেœ পাচার হচ্ছে ভারতে। শীর্ষ চোরাচালানিরা স্থল ও নদী পথ দিয়ে স্বর্ণের বিশাল চালান ভারতে পাচার করছে। বুধবার (১৫ জুলাই ২০২০) সকালে ভোমরা বন্দর ফল মোড় এলাকা থেকে স্বর্ণের বারসহ এক মহিলা চোরাচালানিকে আটক করেছে ভোমরা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি সদস্যরা স্বর্ণ চোরাচালানি আছিয়ার কাছ থেকে একটি স্বর্ণের বারসহ তাকে আটক করে। বিজিবির হাতে আটক হওয়া শীর্ষ স্বর্ণ চোরাচালানি আছিয়া (৬৫), সদর উপজেলার ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দা। সে দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে কোটি কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণের বার ভারতে পাচার করে আসছে বলে একটি গোপন সূত্র জানিয়েছে। এদিকে ধৃত স্বর্ণের বারসহ আটক হওয়া চোরাচালানি আছিয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভোমরা ক্যাম্পের সুপেদার আশরাফ আলী। তিনি জানান, স্বর্ণের বারসহ চোরাচালানি আছিয়াকে সাতক্ষীরা বিজিবি ব্যাটালিয়নে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্তে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের শীর্ষ চোরাচালানিরা হয়ে উঠছে বেপরোয়া। সম্প্রতি লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্তে স্বর্ণ অত্মসাতের অভিযোগে মৃত মোহর আলীর কন্যা মোস্লেমাকে অভিযুক্ত করেছে লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্তের মূলহোতা স্বর্ণ পাচারকারী মৃত করিম গাজীর ছেলে জহুরুল ইসলাম। স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগে স্বর্ণ বহনকারী মোসলেমাকে কয়েক দফায় শারিরীক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হয় মূলহোতার পক্ষ থেকে। কিন্তু কোন কিছুতে উদঘাটন হয়নি স্বর্ণ আত্মসাতের বিষয় নিয়ে। এদিকে স্বর্ণ চোরাচালানী মোসলেমার ভিডিও ধারণকৃত বক্তব্য, সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির গুরুত্বপূন্য অভিমত ও বক্তব্যের ভিত্তিতে উঠে এসেছে স্বর্ণের চোরাচালানের বহু অজানা তথ্য। চোরাচালানি মোসলেমার ভিডিও ধারণকৃত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সে জানায়, গত এক মাস পূর্বে জহুরুলের দেওয়া একটি প্যাকেটে দুই কেজি ওজন স্বর্ণ নিয়ে লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্তের আফতাব উদ্দীন মুন্সির বাড়ী সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ভারতে যাওয়ার পথে বিজিবি তাকে লক্ষ্য করে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে মোসলেমা জীবন বাঁচাতে স্বর্ণ ভর্তি প্যাকেটটি ফেলে পালিয়ে চলে আসে। ফেলে দেওয়া স্বর্ণ ভর্তি প্যাকেটটি কে বা কারা আত্মসাত করেছে এ ব্যাপারে মোসলেমা কিছুই জানে না বলে সাংবাদিকদের জানায়। এই স্বর্ণ পাচারকারী মোসলেমাকে কতদিন যাবৎ স্বর্ণ পাচার কাজে নিয়োজিত রয়েছে বলে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, প্রায় পনের দিন যাবৎ সে স্বর্ণ পাচারের কাজে জড়িত রয়েছে। কিন্তু সীমান্তের একাধিক প্রত্যক্ষ সূত্র জানায়, স্বর্ণ চোরাকারবারিরা দিনে ও রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ বার যাতায়াত করে। প্রতিবার পাচার কালে দুই কেজি স্বর্ণের পরিমান হলে প্রতি দিনে ১০ কেজি স্বর্ণ পাচারের হিসাবে প্রতি মাসে ৩শ কেজি এবং প্রতি বছরে পাচারকৃত স্বর্ণের পরিমান দাড়ায় ৩৬শ কেজি। সুতরাং প্রতি বছর সাতক্ষীরার এই লক্ষ্মদাঁড়ী সীমান্তের চোরাই পথ দিয়ে ৩৬শ কেজি অর্থাৎ ৯শ মন সোনা ভারতে পাচার হচ্ছে। স্বর্ণ পাচারের ব্যাপারে পুলিশ গোয়েন্দা (ডিএসবি) আব্দুল হামিদের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্ত দিয়ে অহরহ স্বর্ণ পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। এ ছাড়া এই সীমান্তে প্রায় ৫০ জন শীর্ষ স্বর্ণ চোরাচালানি রয়েছে। মাঝে মধ্যে কিছু স্বর্ণ ও স্বর্ণ বহনকারী পুরুষ ও নারী আটক হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইর রয়েছে মূলহোতারা। একটি জরিপে জানা গেছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ভোমরা ও লক্ষ্মীদাঁড়ী সীমান্তের অবৈধ পথ দিয়ে প্রায় ৯শ মন স্বর্ণ ভারতে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here