শহিদুল ইসলাম দইচ : গতকাল সকাল থেকে যশোরের ১৭টি এলাকায় রেড জোন কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। প্রশাসন থেকে রেড জোনের কোন ঘোষণাও দেয়া হয়নি এলাকাগুলোতে। ফলে মানুষের চলাচল ছিল স্বাভাবিক দিনের মতো। অবশ্য সংশ্লিষ্টদের দাবি জনপ্রতিনিধিদের সাথে সভা করে আজ বিকেল থেকে প্রচারণাসহ রেড জোন এলাকায় লকডাউন কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
যশোরে আজ ১৬ জুন পর্যন্ত করোনা পজেটিভের সংখ্যা ২৪২জন। করোনা ভাইরাসের সংক্রামনের এলাকা ভিত্তিক সংখ্যা বিবেচনায় গতকাল যশোর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং শহরতলীর উপশহর ও আরবপুর ইউনিয়নকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে জেলার আরো ৫টি পৌরসভার ১০টি ওয়ার্ড এবং আরো ৪টি ইউনিয়নকে রেড জোন ঘোষণা করেছে যশোরের জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। আজ সকার ৬টা থেকে রেড জোন এলাকাগুলোতে লকডাউন কার্যকর হওয়ার নির্দেশনা ছিল। সে মতে এলাকাগুলোর জরুরি সেবার বাইরে থাকা সরকারি, বেসরকারি সকল অফিস ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কথা। মানুষের চলাচলও সীমিত হওয়ার কথা। কিন্তু তা বাস্তবে হয়নি। এমনকি প্রচারণা না হওয়ায় রেডজোনের বিষয়টিও সঠিকভাবে কেউ জানেন না।
আরবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু সাঈদ বলেন, আজ সকালে পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি আমাদের ইউনিয়ন রেড জোন হিসেবে ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রেড জোন নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রচারণা শুনিনি। প্রচারণা না হওয়ায় মানুষ স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করছে। সংক্রামন রোধে প্রচারণা খুবই জরুরি।
উপশহর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাব্বির হোসেন বলেন, রেড জোন ঘোষণা হয়েছে ফেসবুকে দেখেছি। এলাকায় কোন প্রচারণা চালানো হয়নি। ফলে মানুষ সকাল থেকেই যে যার কাজে বের হয়েছেন। মাস্ক পড়ে স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন। যেহেতু রেড জোন ঘোষণা হয়েছে তাই কড়াকড়ি আরোপ জরুরি। এদিকে আরবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম বলেন, রেড জোনের ব্যাপারে ঠিকভাবে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তাছাড়া রেড জোন এবং লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গেলে জেলা প্রশাসনের সহায়তা খুব জরুরি। কারণ অন্তত ৫০টি পয়েন্ট দিয়ে আমার ইউনিয়নে প্রবেশ করা যায়। এসব পয়েন্টে প্রশাসনের লোক দিতে হবে। লকডাউন ঘোষণা দিলে দরিদ্র মানুষের খাবার জন্য ঘরের বাইরে চলে আসবে; তাদের ঠেকানো কষ্টকর হয়ে যাবে। এজন্য প্রশাসনের সার্বিক সহায়তা ছাড়া রেড জোন কার্যকর করা অসম্ভবভ। উপশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু বলেন, আমার ইউনিয়নে মাত্র দু’জন রোগী। কিভাবে রেড জোন ঘোষণা হলো বুঝলাম না। তাছাড়া আমার এলাকাসহ যেসব এলাকা রেড জোন ঘোষণা হয়েছে, সেখানে সরকারি অফিস রয়েছে। সেগুলো বন্ধের নির্দেশনা কে দেবে। ইউনিয়ন পরিষদতো সেটা বলার অধিকার রাখে না।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনপ্রতিনিধিদের সভার জন্য ডেকেছেন। সেখানে বাস্তবতা তুলে ধরা হবে। সভা শেষে রেড জোন কার্যকর করার বিষয়ে প্রচারণাসহ সকল উদ্যোগ নেয়া হবে।
যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বলেন, সকাল থেকে রেড জোন কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু কর্মপন্থা নির্ধারণে জনপ্রতিনিধিদের সাথে সভা চলছে। সভা শেষে আজ বিকেল থেকে প্রচারণাসহ রেড জোন এলাকায় লকডাউন কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আরিফ বলেন, প্রস্তুতির জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধিদের সাথে সভা করছেন। ফলে রেড জোন কার্যকর হতে আরো দুই একদিন সময় লাগবে। প্রস্তুতি ছাড়া ঘোষণা দেয়া ঠিক হয়েছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকার ঘোষণা না হলে প্রস্তুতি নেবে কিভাবে। প্রস্তুতির কাজ চলছে, শেষ হলেই রেড জোন এলাকায় লকডাউন কার্যকর করা হবে।