অভয়নগর প্রতিনিধি ঃ অভয়নগরে চাউলের বাজারসহ নিত্যপণ্যের বাজার মারাত্বক অস্থির হয়ে উঠেছে। বস্তাপ্রতি চাউলের মূল্য ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারী বিক্রেতার দাবী করছেন মিল মালিকদের অসাধু কারসাজির কারণেই বাড়ছে চাউলের দাম। গত এক মাস ধরে চাউলের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। মিল মালিকেরা বাজারে চাউলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধানের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চাউলের মূল্য বাড়ছে। পাইকারি বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে খুচরা বাজারে দাম বাড়ছে। নিত্য পণ্যের মূল্য নি¤œ আয়ের সাধারণ মানুষের ক্রয়ের ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। অভয়নগরের চাউলের বাজার উত্তরবঙ্গের উপর নির্ভরশীল। উত্তরবঙ্গ থেকে আগত ধান অভয়নগরের বিভিন্ন অটো ও হাস্কিং মিলে প্রসেসিং হয়ে বাজারজাত করা হয়। চাহিদার অধিকাংশ চাউল আসে নওগাঁ, দিনাজপুর, কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি স্থান থেকে। জানা গেছে, বাজারে চিকুন চাউলের দামই বেশি বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান, চিকুন চাউল-২৮ বস্তাপ্রতি(৫০ কেজি) বেড়েছে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। নওয়াপাড়া পাইকারী বাজারে চিকুন চাউলের মধ্যে জিরাশাইল, মিনিকেট, পাইজাম, বাসমতী, চাউলের দাম বেড়েছে বেশি। বর্তমানে জিরাশাইল বস্তা প্রতি দুই হাজার তিনশত, মিনিকেট দুই হাজার আটশত, পাইজাম ও বাসমতি দুই হাজার সাতশত টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মোটা চাউলের দামও বেড়েছে।
নওয়াপাড়া পরশ অটো রাইস মিলের মালিক মোঃ আনিসুর রহমান আনিস সাংবাদিকদের বলেন, বাজারে ধানের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চাউলের মূল্য ক্রমে বাড়ছে, এখানে মিল মালিকদের কোন কারসাজি নেই। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন পূর্বেও মোটা ধানের দাম ছিল ৬৫০ টাকা মন যা বর্তমানে ৮৫০ টাকা, চিকুন ধানের দাম পূর্বে ছিল ৭০০ টাকা যা বর্তমানে ৯৫০ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী মিল মালিকরা চল্লিশ দিন পর্যন্ত ধান-চাউল মজুদ রাখতে পারবে। বাজারে কিছু ফড়িয়ারা ধান-চাউল অবৈধ মজুদ করে সরবরাহে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বৃদ্ধি করে চলেছে। মেসার্স সমবায় রাইস মিলের মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, বাজারে মৌসুমী বোরো ধানের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা স্বত্বেও আড়তদারদের মজুতদারীর জন্য বাজারে ধান-চাউলের সরবরাহ কম, এছাড়া করোনা পরিস্থিতির জন্য বাজার অনেকটা অস্থিতিশীল, এ কারনেও মূল্য বাড়ছে। নওয়াপাড়া বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা মামুন সর্দার,রহমান মোল্যা সাংবাদিকদের বলেন, বাজারে পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামত মূল্য বাড়িয়ে পন্য বিক্রি করছে, এগুলো দেখার কেউ নেই। নওয়াপাড়া বণিক সমিতির সভাপতি ছন্দু মিয়া বলেন, মিল মালিকরা চাউল সরবরাহের জন্য সরকারের নিকট চুক্তিবদ্ধ। কিন্তু তারা সরবরাহ কমিয়ে গুদামে চাউল মজুত করছে। মিল মালিকরা বাজারে ধানের মূল্য বৃদ্ধির কথা বলছেন। বোরো চাউল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তাই চাউলের কোন সংকট নেই। মূলত নওয়াপাড়াসহ উত্তর বঙ্গের মিল মালিকদের কারসাজির জন্যই বাজারে চাউলের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাইকারী চাউল ব্যবসায়ী সুশান্ত, করিম হুজুর, রইজুর, আতাউর, কানাই সাংবাদিকদের বলেন, অভয়নগর এলাকার অটো রাইস মিলের মালিকরা অবৈধ মজুদের কারণে কৃত্রিম সংকট তৈরী হচ্ছে, আর এ কারণে চাউলের দাম বাড়ছে। অভয়নগরের শরখোলা গ্রামের কৃষক আজিম ফকীর, ধোপাদী গ্রামের দবির মোল্যা, কাপাশহাটি গ্রামের শমসের, মধ্যিপুর গ্রামের কাশেম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছিনা। বাজারে মোটা ধান ৬৫০ টাকা, চিকুন ধান ৭৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। চাউলসহ নিত্যপন্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে অভয়নগর উপজেলার ইউএনও নাজমুল হুসেইস ইত্তেফাক প্রতিনিধিকে বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি একটি জাতীয় ইস্যু, আমাদের ভিজিল্যান্স টিম বিষয়টির উপর নজর রাখছে।