যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দিদের মধ্যে সংঘর্ষে ৩ কিশোর নিহত

0
302

শহিদুল ইসলাম দইচ : যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে ‘বন্দি’দের মধ্যে সংঘর্ষে তিন কিশোর নিহত হয়েছে।
নিহত কিশোররা হলো- খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং একই জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার তালিপপুর পূর্বপাড়ার নানু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭)। পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মরদেহ তিনটি এখন যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
যশোর ডিএসবির পরিদর্শক (ডিআই-১) এম মশিউর রহমান জানিয়েছেন, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের মধ্যে (বন্দি হিসেবে পরিচিত) পাভেল ও রবিউলের নেতৃত্বাধীন দুটি গ্রুপ রয়েছে। আধিপত্য বিস্তারের জন্য আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই দুই গ্রুপ সংঘাতে লিপ্ত হয়। এতে উল্লিখিত তিনজন গুরুতর আহত হয়। এর মধ্যে পাভেল গ্রুপের সদস্য রাব্বি ও সুজন আর রবিউল গ্রুপের সদস্য নাঈম।
প্রত্যদর্শী ,পুলিশ ও হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, তিন দফায় তিনটি লাশ হাসপাতালে নিয়ে আসে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের লোকজন। প্রথমে সন্ধ্যা ৬ টা ৩৮ মিনিটে হাসপাতালে আনা হয় নাইম হোসেনের লাশ। এরপর পৌনে ৮ টার দিকে আনা হয় পারভেজ হাসানের লাশ, তারপর ৮টার দিকে আনা হয় রাসেলের লাশ। তবে প্রতিবারই হাসপাতালে লাশ রেখে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের লোকজন হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। ৩ নিবাসির শরীরেই আঘাতের চিহ্ন আছে বলে প্রত্যদর্শিরা জানিয়েছেন। জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. অমিয় দাস দৈনিক যশোরকে বলেন, হাসপাতালে আনার আগে তাদের মৃত্যু হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসার পর বিস্তারিত জানা যাবে। রাতে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল লাইছসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। রাত আটটা ৪০ মিনিটে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন কী কারণে হত্যাকান্ডর ঘটনা ঘটলো তা তদন্তে কমিটি করা হবে। হাসপাতালের চিকিৎসক অমিয় দাস জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তারা মারা যায়। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। বালকদের জন্য দেশে দুটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র আছে। যার একটি গাজীপুরের টঙ্গিতে, অন্যটি যশোর শহরতলির পুলেরহাটে। কিশোর অপরাধীদের জেলখানায় না পাঠিয়ে সংশোধনের জন্য এই উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর এই কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রক। যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রায়ই অঘটন ঘটে। লাশ উদ্ধার, মারপিটের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা, দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়ম জেঁকে বসেছে। এর আগে একটি ঘটনার প্রেেিত জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি এই তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য একগুচ্ছ সুপারিশ করেছিল। কিন্তু অবস্থার যে উন্নতি হয়নি; বরং অবনতি হয়েছে, আজ তিন লাশ উদ্ধারের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হলো। আজকের ঘটনার পর থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের দায়িত্বরতদের কেউ টেলিফোন রিসিভ করছেন না। ফলে এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য এখনো জানা যায়নি। পুলিশের দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে অবস্থানরতদের একটি করে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার থাকে। আজ নিহত রাব্বির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ১১৮৫৩। আর রাসেল ও নাঈমের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার যথাক্রমে ৭৫২৪ ও ১১৯০৭। নাঈম হোসেন ধর্ষণ এবং রাব্বি হত্যা মামলার আসামি ছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here